নয়াদিল্লি: আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ১১ জন। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ (Bilkis Bano Case), শিশুকন্যা-সহ পরিবারের সাত সদস্যকে খুনে যাবজ্জীবন সাজা হয়। কিন্তু সাজা মকুবের আইন প্রয়োগ করে সকলকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাত সরকার (Gujarat Government)। শুধু তাই নয়, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ১১ জনের কপালে তিলক কেটে, মিষ্টিমুখ করিয়ে, মালা পরিয়ে স্বাগত জানানোর দৃশ্যও সামনে এসেছে। সেই নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই ওই ১১ জনের হয়ে সওয়াল করতে দেখা গেল গুজরাতের বিজেপি (BJP) বিধায়ক সিকে রাউলজিকে (CK Raulji)। 


বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তিতে বিতর্কিত মন্তব্য বিজেপি বিধায়কের


গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল রাউলজির কাছে। জবাবে সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘অপরাধ ঘটিয়েছে কিনা জানি না আমি। তবে জেলে ওদের আচরণ ভাল ছিল। ওরা সব ব্রাহ্মণ সন্তান। মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ।’’


২০০২ সালের গোধরায় সবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের পর গুজরাত জুড়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বিলকিস। কোলের সন্তান এবং পরিবারের মোট ১৫ সদস্যের সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ৩ মার্চ ধূ ধূ জমি ঘিরে গজিয়ে ওঠা ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই সময় কাস্তে, তলোয়ার, লাঠি নিয়ে ২০-৩০ জনের দল তাঁদের উপর চড়াও হয়। গণধর্ষণের শিকার হন বিলকিস। বিলকিসের চোখের সামনে পরিবারের সাত সদস্যকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালান ছ’জন।


আরও পড়ুন: Netaji Subhash Chandra Bose: ‘বেঁচে থাকতে রহস্যের উদ্‌ঘাটন দেখতে চাই’, টোকিওয় রাখা চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষা চান নেতাজি-কন্যা অনিতা


তার পরেও দীর্ঘ দিন এ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সমাজকর্মীদের তৎপরতায় বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হলে, ২০০৪ সালে ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। আমদাবাদে শুরু হয় শুনানি। কিন্তু সেখানে তদন্ত হলে, প্রমাণ লোপাট করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিলকিস। তাতে আমদাবাদ থেকে মুম্বইয়ে মামলাটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার পর সিবিআই আদালত ওই ১১ জনকে যাবজ্জীবনের সাজা শোনায়। গর্ভবতী মহিলাকে ধর্ষণের ষড়যন্ত্র, খুন এবং বেআইনি জমায়েত ধারায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দেওয়া হয় অন্য সাত জনকে। শুনানি চলাকালীনই মৃত্যু হয় এক জনের।


এর পর, ২০১৮ সালে বম্বে হাইকোর্ট সেই সাজা বহাল রাখে। অন্য সাত জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তও খারিজ করে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ক্ষতিপূরণবাবদ বিলকিসকে ৫০ লক্ষ টাকা, চাকরি এবং বাড়ি দিতে হবে বলে গুজরাত সরকারকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।  


বিলকিসের ধর্ষকদের ছেড়ে দেওয়ায় তীব্র সমালোচনা


দোষী সাব্যস্ত ১১ জনের মধ্যে একজন সম্প্রতি সাজা মকুবের আবেদন জানায়। সোমবার তাদের মুক্তি দেওয়া হয় জেল থেকে। তার পর মালা পরিয়ে, মিষ্টি খাইতে তাদের স্বাগত জানানোর অভিযোগ ওঠে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে।