কলকাতা : ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করার গর্বের দিন। স্বাধীনতা দিবস। দিনটাকে গর্বের সঙ্গে পালন করে আসমুদ্রহিমাচল। সারা দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হয় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। যাঁদের জন্য ইংরেজদের অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল আমাদের দেশ ভারতবর্ষ। দেশকে স্বাধীন করার পিছনে যে বিপ্লবীদের নাম করা হয়, তাঁদের মধ্যে বাদ থাকেন না নারীরাও। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। দেশের জন্য় তাঁরা উৎসর্গ করেছিলেন নিজেদের জীবনও। আজ স্বাধীনতা দিবসে দেখে নিন এমন পাঁচজন নারীর কথা, যাঁরা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শত অত্যাচারের পরও ইংরেজদের কাছে হার মানেননি।


১. বীণা দাস - ১৯১১ সালের ২৪ অগাস্ট কৃষ্ণনগরে বাবা বেণীমাধব দাস এবং মা সরলা দেবীর ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন বীণা দেবী। তাঁর বাবা ছিলেন একাধারে শিক্ষক অন্যদিকে একজন সমাজসেবীও। তাই সমাজ তথা দেশের জন্য কিছু করা তাঁর রক্তেই বইছিল। ১৯৩২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন হলে সেই সময়ের বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনের উপর গুলি চালিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। 


২. সরোজিনী নায়ডু - ১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদে জন্ম সরোজিনী নায়ডুর। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় যোদ্ধা। পাশাপাশি সরোজিনী নায়ডুকে আমরা দ্য নাইটিঙ্গল অফ ইন্ডিয়া নামেও চিনি। জাতির জনক মহাত্মা গাঁধীর সঙ্গে ডান্ডি পদযাত্রায় যোগ দেন তিনি। মহাত্মা গাঁধী গ্রেফতার হওয়ার পর ধারাসন সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন তিনি। সরোজিনী নায়ডু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপালও হন তিনি।


৩. ঝাঁসীর রানি লক্ষ্মীবাঈ - ইংরেজদের শাসনকালে ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিদ্রোহের অন্যতম পথিকৃত লক্ষ্মীবাঈ। ভারতের ইতিহাতে বিপ্লবী নেত্রী হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় ব্যক্তি। দেশের সাহসী নারীদের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয় তাঁকে। 


৪. ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সায়গল - পেশায় চিকিৎসক ছিলেন ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সায়গল। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। কিন্তু লোভনীয় চাকরি ছেড়ে তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের রানি ঝাঁসি রেজিমেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা হিসেবে আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী সংগঠন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীও ছিলেন তিনি।


৫. ননীবালা দেবী - বাঙালি বিপ্লবীর পাশাপাশি ননীবালা দেবী ছিলেন প্রথম মহিলা রাজবন্দি। ১৯১৫ সালে আলিপুর জেলে বন্দি বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদারের কাছ থেকে গোপন তথ্য নিয়ে আসার জন্য তাঁর স্ত্রীর পরিচয় দেখা করেন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে। একজম বিধবা হিন্দু মহিলা হিসেবে তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপ ছিল অকল্পনীয়। বিভিন্ন সময়ে পলাতক বিপ্লবীদের তিনি নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিতেন। পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় তিনি পালিয়ে গেলেও পরবর্তীতে ধরা পড়ে যান। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় গ্রেফতার করে বেনারসের জেলে পাঠায়। সেই সময়ে তিনি কলেরা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। জেনে ভয়ঙ্কর অত্যাচার করা হয় তাঁর উপর। যদিও শত অত্যাচারের পরও বিপ্লবী সংগঠনের গুপ্ত কোনও খবর তাঁর থেকে বের করতে পারেনি পুলিশ। পরবর্তীকালে তাঁকে প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয়।