নয়াদিল্লি: রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম বিরুদ্ধস্বরের প্রতীক হয়ে উঠেছিল যে তেরঙ্গা, ঔপনিবেশিক শাসনের পতনের পর আজ স্বাধীনতাপ্রাপ্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। গাড়িতে তেরঙ্গা লাগিয়ে বিচরণ করেন সরকারি কর্তা-ব্যক্তিরা। তেরঙ্গা অর্ধনমিত রেখে পালিত হয় রাষ্ট্রীয় শোক। আবার তেরঙ্গায় দেহ মুড়ে সম্মান জানানো হয় শহিদকে। অর্থাৎ তেরঙ্গার সঙ্গে জড়িয়ে গোটা দেশের মর্যাদা। তাই তেরঙ্গার মর্যাদা যাতে অক্ষুণ্ণ তাকে, সে ব্যাপারেও সচেতন হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের (Independence Day 2022)।
তেরঙ্গার সম্মান অক্ষুণ্ণ রক্ষায় দেশে কার্যকর পতাকা বিধি
তেরঙ্গার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশে ‘ফ্ল্যাগ কোড ২০০২’ বিধি রয়েছে (Flag Code)। তেরঙ্গার অমর্যাদা প্রতিহত করতে রয়েছে জাতীয় সম্মান আইন, ১৯৭১-এ। তাই তেরঙ্গা উত্তোলন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধি মেনে চলা জরুরি, যার বিশদ বর্ণনা রয়েছে ‘ফ্ল্যাগ কোড ২০০২’ বিধিতে। পতাকা উত্তোলন, তার ব্যবহার এমনকি তার প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও রয়েছে কিছু নিয়ম।
২০০২ সালের ২৬ জানুয়ারি দেশে কার্যকর হয় ‘ফ্ল্যাগ কোড’। তিনটি ভাগে পতাকা বিধিকে ভাগ করা হয়েছে। সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ নাগরিকের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা নিয়ম।
তেরঙ্গা তৈরির উপাদান
শুরুতে পলিয়েস্টার দিয়ে তৈরি যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তেরঙ্গা তৈরির অনুমোদন ছিল না। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেই নিয়ম সংশোধন করে সরকার। পলিয়েস্টার ব্যবহার করে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তেরঙ্গা তৈরিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। তাই বর্তমানে সুতি, খাদি, সিল্প, উলের পাশাপাশি মিশ্র উপাদানের পলিয়েস্টার দিয়েও হাতে এবং যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তেরঙ্গা তৈরি করা যায়।
আরও পড়ুন: Independence Day 2022: স্বাধীনতা দিবস পালন করুন বলিউডের এই বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গানগুলির সঙ্গে
জাতীয় পতাকার প্রদর্শন কখন কাম্য
সরকারি, বেসরকারি এবং শিক্ষা ও গণ প্রতিষ্ঠানগুলির অনুষ্ঠানে বছরের সবদিনই পতাকা প্রদর্শনের অনুমতি রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রের তেরঙ্গার মর্যাদা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে, তা সুনিশ্চিত করা জরুরি।
জাতীয় পতাকার উত্তোলন
সংশোধিত নিয়ম অনুযায়ী, বর্তমানে সূর্যাস্তের পরও তেরঙ্গা উত্তোলন করা সম্ভব। আগে সূর্যাস্তের পর পতাকা উত্তোলন নিষিদ্ধ ছিল।
আকারে আয়তনে কেমন হবে তেরঙ্গা
পতাকার আয়তন যেমনই হোক না কেন, তার আকার হতে হবে আয়তকার। দৈর্ঘ্য এবং উচ্চতা ৩:২ অনুপাতে রাখা কাম্য।
গাড়িতে তেরঙ্গা লাগাতে পারেন কারা
সরকারি ক্ষেত্রে বিশেষ পদাধিকারী ব্যক্তি, অনুমোদন সাপেক্ষে গাড়িতে তেরঙ্গা লাগাতে পারেন। গাড়িতে তেরঙ্গা লাগাতে পারেন রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, দেশের প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, হাইকোর্টের বিচারপতি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা।
পতাকা উত্তোলনের পর
ব্যবহার এবং উত্তোলনের পর জড়ো হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পতাকা পুড়িয়ে ফেলা যায়। সে ক্ষেত্রে আগে পতাকা মুড়তে হবে যত্ন সহকারে। নির্দিষ্ট জায়গা বেছে নিয়ে আগে পরিষ্কার করে নিতে হবে। কাঠের উপর আগুন ধরাতে হবে, তার মাঝে রেখে দিতে হবে পতাকা। হাতে ধরে পতাকায় আগুন ধরানো কাম্য নয়। অথবা এমন ভাবে কাপড় নষ্ট করতে হবে, যাতে পতাকার অমর্যাদা না হয়। ধরে ধরে পতাকা মুড়ে, বাক্সে পুরে মাটির নীচে পুঁতে দেওয়ায় যায়। সে ক্ষেত্রে নীরবতা পালন করতে হয়। কাগজের পতাকা ব্যবহারের পর মাটিতে ফেলে দেওয়া তেরঙ্গার অবমাননা হিসেবেই ধরা হয়।