কলকাতা: একদল রয়েছে যাঁরা সাধারণ। এরপর একদল আছে যাঁরা সেরা। শেষে আসে আরেকটি দল, যাঁরা সেরার সেরা। তেমনই সেরার সেরা দল হল ভারতীয় সেনার প্যারা স্পেশাল ফোর্স কমান্ডো-বাহিনী।


প্যারা কমান্ডো হওয়া একটি জিনিস যা অনেক সেনা জওয়ান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত এঁদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনই এই বিশেষ এলিট বাহিনীর অংশ হতে পারেন।


স্পেশাল ফোর্সে অন্তর্ভুক্তির জন্য কোনও নিয়োগ হয় না। বিভিন্ন রেজিমেন্টের জওয়ানরা -- যাঁরা কমান্ডো বাহিনীতে যোগ দিতে ইচ্ছুক, তাঁরা স্বেচ্ছায় আবেদন করেন। 


এরপর, ৬ মাস ধরে তাঁদের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। সেই প্রশিক্ষণ এতটাই ভয়াবহ হয়, যে আবেদনকারীদের বলে দেওয়া হয়, চাইলে তাঁরা প্রশিক্ষণ ছেড়ে মূল ইউনিটে ফেরত যেতে পারেন।


প্য়ারাশ্যুট রেজিমেন্টের ৯ প্যারা স্পেশাল ফোর্স হল ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম স্পেশাল ফোর্স ব্যাটালিয়ন যাঁরা সীমাহীন বীরত্বের একাধিক দৃষ্টান্ত স্থাপন এই সুনাম প্রতিষ্ঠা করেছে যা আগে সামরিক বাহিনীর কাছে অসম্ভব বলে মনে হতো।


শত্রুর সীমানায় ঢুকে তাদের প্রতিরক্ষাকে খতম করার লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় প্রাণঘাতী সেনা জওয়ানদের নিয়ে একটি ছোট দল গঠন করেছিলেন মেজর মেঘ সিংহ। 


অপারেশনের তাৎক্ষণিক প্রকৃতির কারণে দলটিকে প্রথমে 'মেঘদূত বাহিনী' নাম দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে, এই দলটি ভেঙে প্যারাশ্যুট রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়।


১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে গঠিত ৯ প্যারা কমান্ডো হলো প্যারাশ্যুট রেজিমেন্টের প্রথম স্পেশাল অপারেশন্স ইউনিট। মেঘদূত বাহিনীর মূল সদস্যদের দিয়েই এই বিশেষ বাহিনী গঠিত হয়েছিল। ১৯৬৭ সালে ৯ ব্যাটালিয়নকে ভেঙে দ্বিতীয় (১০ ব্যাটালিয়ন) গঠন করা হয়। 


৯ প্যারা স্পেশাল ফোর্সকে ভারতীয় বাহিনীর "ঘোস্ট অপারেটর্স" বলা হয়। কারণ, এই বাহিনীর অপারেশন গোপনীয়তায় মোড় থাকে। আর পাঁচটা দেশের কমান্ডো অপারেশনের মতো এই বাহিনীর অভিযানও কোভার্ট বা গুপ্ত হয়। 


শত্রুদেশের সীমানার একেবারে অভ্যন্তরীণ এলাকায় ঢুকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে শত্রু-সামরিক ও সশস্ত্র ঘাঁটি ধ্বংস ও নাশকতা-বিরোধী অভিযানের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত প্যারা স্পেশাল ফোর্স কমান্ডোরা।


বর্তমানে ভারতীয় সেনায় ৯টি এরকম স্পেশাল ফোর্সের ব্যাটালিয়ন রয়েছে। প্রথমদিকে এক-একটি ব্যাটালিয়নকে এক-একটি যুদ্ধকৌশলে পারদর্শী করে গড়ে তোলা হয়েছিল। 


যেমন ১০ প্যারা স্পেশাল ফোর্সের নাম দেওয়া হয়েছিল 'ডেজার্ট স্করপিয়ন'। নাম থেকেই পরিষ্কার, এই ব্যাটালিয়ন মরুভূমির যুদ্ধকৌশলে পারদর্শী। অন্যদিকে, ৯ প্যারা স্পেশাল ফোর্স ব্যাটালিয়নের বিশেষত্ব পার্বত্য যুদ্ধকৌশলে।


কিন্তু, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবকটি ব্য়াটালিয়নকে সমান সব ধরনের যুদ্ধে পারদর্শী করে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ৈা হয়। এখন আবহাওয়া ও ভূখণ্ডের ধরন নির্বিশেষে যে কোনও ব্যাটালিয়ন যে কোনও পরিস্থির সম্মুখীন হতে পারে।