নয়াদিল্লি: রাত পোহালেই দুই রাষ্ট্রনেতার সাক্ষাৎ। তার আগেই ফ্রান্সের কাছে ধাক্কা ভারতের। ভারতের সঙ্গে যৌথ সাবমেরিন (Submarine Project) প্রকল্প থেকে পিছু হটল ফ্রান্স। জানাল, ভারত সরকারের তরফে প্রস্তাবপত্রে (Request for Proposal/RPF) যে শর্তাবলী আরোপ করা হয়েছে, তা তাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়।


ভারতের সাবমেরিন প্রকল্প থেকে সরল ফ্রান্স


এই মুহূর্তে জার্মানিতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। বুধবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরেঁর (Emmanuel Macron) সঙ্গে সাক্ষাৎ রয়েছে তাঁর। সম্প্রতিই দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছেন মাকরঁ। তাই পুরনো সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিল দুই দেশই। কিন্তু তার আগে, মঙ্গলবার P-751 নামের ওই প্রকল্প থেকে পিছু হটল ফ্রান্স।


দিল্লি সূত্রে জানা গিয়েছে, যৌথ উদ্যোগে মোট ছ’টি সাবমেরিন তৈরির কথা ছিল। তাতে এয়ার ইন্ডেপেনডেন্ট প্রোপালসন (Air Independent Propulsion/AIP) প্রযুক্তি, যার সাহায্যে দ্রত গতিতে ছুটে চলা অবস্থাতেই দীর্ঘ সময় জলের নীচে ডুবে থাকে সাবমেরিন, তা নিয়ে দিল্লির তরফে কিছু শর্ত রাখা হয়েছিল।  তাতে সায় নেই নৌবাহিনীর সরঞ্জাম নির্মাণকারী ফ্রান্সের নেভাল গ্রুপের (Naval Group)।


২০২১-এর জুন মাসে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে P-751 প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সেই মতো দুই ভারতীয় সংস্থা লারসেন অ্যান্ড টার্বো এবং রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থা মাজাগাওঁ ডকস লিমিটেডের জন্য জারি করা হয়ে প্রস্তাবপত্র। তালিকা তৈরি হয় পাঁচ বিদেশি সংস্থারও, যার মধ্যে থেকে যোগ্যতমকে বেছে নিয়ে প্রকল্প শুরু হওয়ার কথা ছিল। নেভাল গ্রুপ ছাড়াও ওই তালিকায় নাম ছিল জার্মানির থিসেন ক্রুপ মেরিন সিস্টেমস, স্পেনেপ নাভান্তিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার দেয়ু এবং রাশিয়ার রসোবরোনেক্সপোর্ট।


আরও পড়ুন: Abortion Rights: কেড়ে নেওয়া হবে গর্ভপাতের অধিকার! ফাঁস হয়ে যাওয়া খসড়া ঘিরে উত্তাল আমেরিকা


বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সারা হলে, প্রস্তাবপত্রে সাড়া দিয়ে কেন্দ্রের কাছে যাবতীয় খুঁটিনাটি জবাব দেওয়ার কথা ছিল। সব খুঁটিয়ে দেখে উপযুক্ত মনে হলে ৪৩ হাজার কোটির ওই প্রকল্পের বরাত হাতে তুলে দিত কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রক। কিন্তু ভারতে নেভাল গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর লুরান্ত ভিদেউ জানিয়েছেন শর্ত নিয়ে আপত্তি থাকায় তাঁদের মধ্যে কারও সঙ্গেই হাত মেলাতে এগিয়ে আসেনি লারসেন অ্যান্ড টার্বো এবং মাজাগাওঁ। তাই প্রকল্পের দরপত্রে সাড়া দেওয়ার সুযোগও হয়নি।


লুরান্তের দাবি, ভারতকে সেরা অফার দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গঠনের লস্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে দেশের অন্দরে সাবমেরিন তৈরিতে সবরকম সহযোগিতা করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। কিন্তু এয়ার ইন্ডেপেনডেন্ট প্রোপালসন নিয়ে যে শর্ত দিয়েছিল দিল্লি, তা পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ ফরাসি নৌবাহিনীও ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করে না। তাই এই প্রকল্প থেকে নাম তুলে নিয়ে অন্য দিকে মনোযোগ করছেন তাঁরা।


নৌবাহিনীর শক্তিবৃদ্ধিই লক্ষ্য ভারতের


ফ্রান্সের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছ’টি স্করপেন ক্লাস সাবমেরিন তৈরির পরিকল্পনা ছিল, যা কিনা লুকিয়ে হামলা চালাতে অত্যন্ত পারদর্শী। জলের নীচ দিয়ে যাতায়াতের সময় ইঞ্জিনের আওয়াজ প্রায় শোনাই যায় না। ফলে সহজে ধরা পড়ে না প্রতিপক্ষের রেডারেও।