নয়াদিল্লি: একাধিক বার তাঁর কথায় উঠে এসেছে ‘শহুরে নকশাল’দের উল্লেখ। এ বার বন্দুকধারীদের পাশাপাশি ‘কলমধারী মাওবাদী’দের উল্লেখ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর কথায়, “সব ধরনের নকশালবাদকে পরাস্ত করতে হবে আমাদের, সে বন্দুকধারীই হোক বা কলমধারী। ওদের জন্য সমাধান বার করতে হবে।”


কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে হরিয়ানার সুরজকুণ্ডে চিন্তন শিবির চলছে। ভিডিও কনফারেন্সে শুক্রবার তাতে যোগ দেন মোদি। বক্তৃতা করার সময় ‘কলমধারী মাওবাদী’দের কথা উল্লেখ করেন তিনি।


ভিডিও বক্তৃতায় মোদি বলেন, “গত কয়েক বছরে সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিয়েছে সব রাজ্যের সরকার। সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় এর মোকাবিলা করতে হবে। সব ধরনের নকশালবাদের মোকাবিলা করতে হবে, সে বন্দুকধারীই হোক বা কলমধারী। ওদের জন্য সমাধান বার করতে হবে।”


সোশ্য়াল মিডিয়ায় ভুয়ো তথ্যের রমরমার জেরে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে বলেও মন্তব্য় করেন মোদি। তিনি বলেন, “আইনের প্রতি অনুগত ভারতের নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং অধিকার রক্ষায় সব ধরনের নেতিবাচক শক্তির মোকাবিলা করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এক টুকরো ভুয়ো খবরও দেশে আলোড়ন ফেলে দিতে পারে। মানুষকে বোঝাতে হবে, কোনও বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বা বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে, আগে তার সত্যতা যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন।”



এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, “নকশালবাদ ভারতের সবচেয়ে বড় বিপদ, অনেক আগে মনমোহন সিংহ বলেছিলেন। কিন্তু তার মানে এি নয় যে, সেই নকশালবাদীদের নামে বিরোধীদের খতম করার রাস্তায় নামব। কাকে প্রকৃত নকশাল বলছে, সেটা তো সরকারকে আগে বলতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে কোনও কথা, সমালোচনাকেই নকশালবাদ বলে দাগিয়ে দেওয়া হতে পারে। সমালোচনা বন্ধ করতেই মোদি সরকার সব শক্তি প্রয়োগ করে চলেছে। যে বিরোধিতা করবে,. সে হয় নকশাল, নয় পাকিস্তানি, নয় সন্ত্রাসবাদী।“


 তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের কথায়, “মাওবাদী কী, যাঁরা মাও সে তুংয়ের অনুগামী, সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাদখলে বিশ্বাস করে। আসলে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। পাকিস্তানের আগ্রাসন বন্ধ করা যাচ্ছে না, চিনের আগ্রাসন বন্ধ করা যাচ্ছে না। অন্য দিকে, একনায়কতন্ত্র, ক্ষমতার দম্ভ। ভারতের গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সকলকে ভয় দেখিয়ে রাখা হচ্ছে। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। বিচারব্যবস্থাকে প্রলোভন দেখানো হচ্ছে, রামমন্দিরের মতো রায় দিতে পারলে অবসরের পর রাজ্যসভার সাংসদ। আর সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ হচ্ছে। রাজা তোর কাপড় কথায় জিজ্ঞেস করলেও, সে মাওবাদী হয়ে যাবে। আজ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বেঁচে থাকলে, তাঁরাও মাওবাদী হয়ে যেতেন।”


সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ির কথায়, "প্রধানমন্ত্রী ভূত দেখছেন। যে ওঁর বিরোধিতা করবেন, তাঁকেই মাওবাদী বলে দেওয়া হচ্ছে। ফ্রিজে কী খাবার রয়েছে, তার জন্য পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। তা নিয়ে কোনও কথা নেই মুখে। যে ওঁর বিরুদ্ধে কথা বলবেন, তিনি কবি হোন, সাহিত্যিক হোন, সাংবাদিক হোন, বিরোধী রাজনীতিক হোন, তাঁদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর আক্রমণ নামিয়ে আনছেন। স্বৈরশাসনের পদক্ষেপ শোনা যাচ্ছে বলে তাই মন্তব্য করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি।“