চেন্নাই : গত সেপ্টেম্বরে পাহাড়ঘেরা সিরুমালাই বেড়াতে গিয়েছিলেন বছর ৬২ র মাথিভানান। সঙ্গে ছিলেন ব্যক্তির মেয়ে জামাই। বেড়াতে গিয়ে তিনি বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেন। লেখেন, ‘Thuppakki Payirchikaga Sirumalai Payanam’, অর্থাৎ শুটিং-এর জন্য সিরুমালাই ভ্রমণ। ব্যাস এই টুকুই লিখেছিলেন ওই ব্যক্তি। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় হল, তিনি CPI (ML) এর সদস্য।
আর এই পোস্টটাই ভাদিপাত্তি পুলিশের (Vadipatti police) কাছে হয়ে দাঁড়াল বিরাট অপরাধ ! ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ আনে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধারায় মামলা রুজু করৈ হয়। এমনকী রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগও করে পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির Section 124 A ধারায় করা হয় মামলা। তাঁকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হয়। যদিও ম্যাজিস্ট্রেট সেই অভিযোগ খারিজ করে দেন।
এই মামলার শুনানিতে বিদ্রুপের স্বরে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেন বিচারক। এই অত্যধিক উদ্যমী পুলিশি পদক্ষেপে বিস্মিত হয়ে, মাদ্রাজ হাইকোর্টের (মাদুরাই বেঞ্চ) (Madras High Court) বিচারপতি জি আর স্বামীনাথন শুধুমাত্র মাথিভানানের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত এফআইআর বাতিলই করেননি, সেই সঙ্গে ' হোলি কাউ' প্রসঙ্গ তুলে মন্তব্য করেন, ভারতীয় হিসেবে আমাদের একটু হাসতে শিখতে হবে। সেই সঙ্গে বিচারক কার্টুনিস্ট ও রম্যরচনাকৈর জগ সুরাইয়া, বাচি করকরিয়া জি. সম্পত , এঁদের নাম উল্লেখ করে বলেন, এঁদের কাউকে যদি এই রায়টি দিতে হত, তবে তাঁরা ভারতের সংবিধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের প্রস্তাব করতেন হয়ত। এঁরা হয়ত মৌলিক কর্তব্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইতেন হাসা ও হাসানোর অধিকারটিও।
সারা ভারতের একেক জায়গায় একেক ব্যক্তি বা বস্তুর বিশেষ গুরুত্ব আছে। তাঁদের নিয়ে কেউ মজা করার স্পর্ধা দেখায় না। তাহলে প্রশ্ন হল, কী নিয়ে মজা করবে মানুষ? এই প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি বলেন, এংদের নির্দিষ্ট কোনও মাপকাঠি নেই। একেকজন মানুষের কাছে , একেকটি এলাকায় একজন ব্যক্তির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যোগীর ভূখণ্ডে যেমন গরুর আলাদা গুরুত্ব। বাংলার মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশেষ স্থান। তামিলনাডুতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেরিয়ারের। মহারাষ্ট্রের মানুষের কাছে বিশেষ স্থানে রয়েছেন ছত্রপতি শিবাজি বা বীর সাভারকর। কিন্তু সারা ভারতেই যে বিষয়টির সবথেকে বেশি গুরুত্ব , তা হল , জাতীয় নিরাপত্তা।
বিচারক বলেন, মাথিভানান হয়ত একটু মজাই করতে চেয়েছিলেন, হয়ত প্রথমবারের জন্যই। বিচারকের পর্যবেক্ষণ, "যুদ্ধ চালাতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। সেখানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের পাশাপাশি অনেক ব্যক্তিকে সংগঠিত করতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন হয় সমন্বিত প্রচেষ্টা। এখানে তেমন কিছুই করা হয়নি।
এই মামলাটিকে “অযৌক্তিক” এবং “আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার” বলে অভিহিত করে বিচারক এফআইআর বাতিল করে দেন।