নয়াদিল্লি: কাঁটাতারের বেড়ার কথা শুনেছেন। কিন্তু শুতে-বসতে দেশকাল পেরোচ্ছেন, দিনযাপনের মাঝে আলাদা করে সে কথা মনে আসে না। নিত্য ঝামেলা, দ্বন্দ্ব, অশান্তির মধ্যে এই ভারতেই রয়েছে এমন জায়গা। যেখানে ভিসা-পাসপোর্ট লাগে না, শোওয়ার ঘর থেকে, তার বাইরের দোরের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে সীমান্তরেখা। এক কামরার ঘরেও সেখানে বিরাজ করছে দুই দেশের অস্তিত্ব।
নিত্য ঝামেলা, দ্বন্দ্ব, অশান্তির মধ্যে এই ভারতেই রয়েছে এমন জায়গা
হাস্যরসে ভরা মন্তব্য হোক বা ব্য়াঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে চোখে আঙুল দিয়ে সমাজের ভুল ধরানোর কাজটিতে যথেষ্টই দক্ষ নাগাল্যান্ডের মন্ত্রী তেমজেন ইমনা আলং (Temjen Imna Along)। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল জনপ্রিয়ও তিনি। এই ভারতের মধ্যেই আরও এক ভারতের সন্ধান এ বার নিজের অনুরাগীদের দিলেন তিনি। ভারত এবং মায়ানমার সীমান্তে থাকা লংগোয়া গ্রামের এমনই বেনজির উপাখ্যান সামনে আনলেন।
ট্যুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন ইমনা। তাতে ওই গ্রামের রোজনামচা তুলে ধরেছেন। ইমনা লেখেন, ‘অভূতপূর্ব। এই আমার ভারত। এখানে কেউ যদি সীমান্ত পেরোতে চান, শয়নকক্ষে গেলেই চলবে তাঁর। ভারতে শোওয়া, মায়ানমারে খাওয়া বলা চলে যথার্থই। অতুল্য ভারত’।
আরও পড়ুন: Joshimath Crisis: প্রকৃতির রোষে তলিয়ে যাচ্ছে মাটির গহ্বরে, কেন বিপন্ন জোশীমঠ?
নাগাল্যান্ডের লংগোয়া গ্রামের কথা এখানে উল্লেখ করেছেন ইমনা। নাগাল্যান্ডের মন জেলার মধ্যে পড়ে সেটি। বিবিসি-র একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, মায়ানমারের ঘন জঙ্গল যেমন রয়েছে, তেমনই ভারতের উর্বর কৃষি জমি রয়েছে ওই গ্রামে। সেখানে মূলত কৌনিয়াক নাগা উপজাতির মানুষের বসবাস।
মন জেলার সরকারি ওয়েবসাইটেও একই তথ্য রয়েছে। বলা হয়েছে, দুই দেশের মেলবন্ধন এই গ্রামে। গ্রামের প্রধান এক জনই। এই গ্রামের মধ্যে দিয়ে চারটি নদী বয়ে গিয়েছে, এর মধ্যে দু'টি নদী পড়ছে ভারতে, দু'টি পড়ছে মায়ানমারে।
ইতিহাস অনুযায়ী, ভারত এবং মায়ানমারের সীমান্তের নকশা তৈরি হওয়ার ঢের আগেই লংগোয়া গ্রামের পত্তন হয়। ভারত এবং মায়ানমারের মধ্যে গ্রামটির পত্তন হয় ১৯৭০ সালে। এর পর যখন সীমান্তরেখা টানার সময় হয়, সেই সময় কেউ গ্রামের বাসিন্দাদের পরস্পরের থেকে আলাদা করতে চাননি কেউ। তাই গ্রামের মধ্যে দিয়েই সীমান্তরেখা টানা হয়।
ভারত এবং মায়ানমারের সীমান্তের নকশা তৈরি হওয়ার ঢের আগেই লংগোয়া গ্রামের পত্তন হয়
এই গ্রামের মধ্য দিয়ে যে সীমান্ত এগিয়েছে, তার একটি স্তম্ভে দুই ভাষাতেই লেখা খোদাই করা রয়েছে, বর্মা এবং হিন্দিতে। গ্রামের প্রধানের বাড়ির মধ্য দিয়ে গিয়েছে সীমান্ত। তাতে গ্রামবাসীদের মধ্যেও চালু রয়েছে রসিকতা যে, উনি ভারতে খান, ঘুমাতে যান মায়ানমারে।