নয়াদিল্লি: অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ, উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবই কি জোশীমঠের (Joshimath) বিপদ ডেকে আনল? তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। জোশীমঠের পরিস্থিতি নিয়ে আজ দিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। জোশীমঠের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ৪৫ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী।
কেন বিপন্ন জোশীমঠ? হিমালয়ের কোলে পর্যটকপ্রিয় এক জনপদ। কিন্তু প্রকৃতির রোষে সেই শহরই একটু একটু করে যেন তলিয়ে যাচ্ছে মাটির গহ্বরে। বাড়ি থেকে রাস্তা - সর্বত্র বিরাট বিরাট ফাটল। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, জোশীমঠ শহরটাকেই বসবাসের অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন। কিন্তু, কীভাবে তৈরি হল এই পরিস্থিতি? এর জন্য কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৬ থেকে জোশীমঠের কাছেই শুরু হয় চারধাম প্রকল্প। যার জন্য জায়গায় জায়গায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। এই অঞ্চলেই তৈরি হচ্ছে দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। একটি এনটিপিসির এবং অপরটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে। জল আনার জন্য টানেল বোরিং মেশিন দিয়ে ৮ কিলোমিটার সুড়ঙ্গ বানিয়েছে এনটিপিসি। এসব কারণের জন্যই কি ধীরে ধীরে বসে যাচ্ছে জোশীমঠ?
পরিবেশবিদ রবি চোপড়া বলছেন, "অনিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনার জের। সিকিমে ভূমিকম্পের সময় গিয়ে দেখেছি, ৭ তলা বাড়ি হয়ে গেছে। ১৯৭৬ সালে মিশ্র কমিটি বড় নির্মাণ আটকাতে হবে। না হলে জোশীমঠ বসে যাবে। মিশ্র কমিটির রিপোর্ট কেউ শোনেনি।'' জোশীমঠের পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বারবার এলাকায় যাচ্ছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। বুধবার রাতেও তিনি জোশীমঠেই কাটান। এদিনই তিনি জোশীমঠের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ৪৫ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। জোশীমঠের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার। এদিনই দিল্লির বাসভবনে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গডকড়ি, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী আর কে সিং, কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের সঙ্গে জোশীমঠের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, কীভাবে জোশীমঠকে রক্ষা করা সম্ভব? রবি চোপড়ার কথায়, “সিমলা থেকে শিলং অবধি পাহাড় যেটা আছে, নির্মাণগুলো নিয়ন্ত্রণ মাউন্টেন টাউনশিপ প্ল্যানিং করা উচিত। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত দেখার।’’ এরই মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি চিন্তা বাড়াচ্ছে! বৃষ্টির জলে নরম হচ্ছে মাটি! ফলে ফাটলের মধ্যে ধসের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে! প্রশ্ন হচ্ছে, জোশীমঠের আকাশ থেকে বিপদের এই মেঘ কাটবে কবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।