নয়াদিল্লি: পড়শি দেশ থেকে আসা অমুসলিমদের গুজরাতে নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর সরকার। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে কাটাছেঁড়া। তার মধ্যেই নাগরিকত্ব নিয়ে বার্তা দিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিমদের নিজের রাজ্যে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে কার্যতই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে সওয়াল করলেন মোদি।


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতে, দেশভাগের শিকার হিন্দু-শিখরা। তাঁদের জন্যই CAA চালুর ভাবনা। সোমবার গুরু নানকের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে এ নিয়ে বার্তা দেন মোদি। তাঁর কথায়, "বিভাজনের শিকার হিন্দু, শিখদের জন্য আমরা CAA আইন তৈরি করে ওঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আপনারা দেখেছেন, দেশ থেকে আসা অত্যাচারিত, বঞ্চিত শিখ নাগরিকদের গুজরাতে নাগরিকত্ব দিয়ে ওঁদের মধ্যে এই বিশ্বাস তৈরি করতে চেয়েছি যে, বিশ্বের সর্বত্র শিখরা জানবেন, ভারতই ওঁদের নিজের দেশ।" 


এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, "নরেন্দ্র মোদি বা বিজেপি-র কাছ থেকে ইতিহাস শিখব না। আমরা জানি, বাংলার কত ক্ষতি হয়েছে। দেশের পশ্চিম প্রান্তে পঞ্জাবের কী ক্ষতি হয়েছে জানি আমরা। স্বাধীনতা সংগ্রামে গোটা দেশ লড়াই করেছে। কাউকে ছোট না করেই বলা যায়, সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়েছে বাংলা ও পঞ্জাব। অতীতের ক্ষতকে মুছে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এসেছেন, ভোটার তালিকায় রয়েছেন তাঁরা। তাঁরা সকলে নাগরিক। তাঁদের ভোটে জিতেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মোদি। তাঁরা সরকারি চাকরি করেন। ভোটে দাঁড়াতে পারেন।চলতি ব্যবস্থার মধ্যে নাগরিকত্বদানের অধিকার রয়েছে। নতুন করে ভেদাভেদমূলক পদক্ষেপে আরও ক্ষতি হবে।আর যদি অনুপ্রবেশের কথা বলেন, তা দেখার কথা বিএসএফ-এর। সেই দফতরের দায়িত্ব মোদি এবং অমিত শাহের। তাঁদের হাতেই সবকিছু রয়েছে। ঠেকান অনুপ্রবেশ! তা না করে নাগরিকত্ব নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ভোটের রাজনীতি কাম্য নয়।"


কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর কথায়, "তিন বছর আগে বিল পাশ করেও আইনের বাস্তবায়ন হয়নি। কেউ তো বাধা দেয়নি! ধর্মীয় কারণে নাগরিকত্ব নিয়েই আসলে প্রশ্ন।  নাগরিকত্ব দিত বাদা দেয়নি। ধর্মীয় কারণে নাগরিকত্ব নিয়েই প্রশ্ন। সকলকে দেব, শুধু মুসলমিদের দেব না, এমন নীতিতে অনুমোদন দেয় না ভারতের সংবিধান। একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে নিশানা করে এমন আইন বৈধ নয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সবকিছুর নিয়মও রয়েছে। নির্বাচনের আগে গুজরাতে মেরুকরণ ঘটাতেই হাওয়া গরম করা হচ্ছে। যেমনটা হয়েছিল বাংলায়, ২০২১-এর নির্বাচনের আগে।"


সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটি সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "প্রধানমন্ত্রী অসত্য বলছেন। সিএএ-তে শুধু হিন্দু-শিখ বলা নেই, জৈন, খ্রিস্টানদের কথাও আছে। আইনন এক, আর অন্য কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের পক্ষে তা দুর্ভাগ্যজনক। ৭৫ বছর আগে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এত বছর ধরে যাঁরা আছেন, তাঁঁরা নাগরিক নন! তাঁরা তো ভেট দেন, ভোটে দাঁড়ান, মন্ত্রী হন! উদ্বাস্তুদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু কাগজের উপর নির্ভর করে না নাগরিকত্ব। দেশকাল, পরম্পরা, জীবন-জীবিকা, সবকিছু জড়িয়ে। এত দিন ধরে যাঁরা এ দেশের নাগরিক, তাঁদের বেনাগরিক করে আবার নতুন করে নাগরিকত্বের কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন প্রধানমন্ত্রী।" মোদি বিভাজনের রাজনীতি করছেন বলেও মন্তব্য করেন সুজন।