বিজেন্দ্র সিংহ, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: এতদিন কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধীদের বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে দূরে থাকছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এবার সনিয়া গাঁধীর বাসভবনে বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বৈঠকে ডাকাই হল না তৃণমূলকে। তৃণমূলও পাল্টা জানিয়ে দিল, তারা কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলবে।


মোদি সরকারের বিরোধিতার রণকৌশল স্থির করতে এদিন বৈঠকে বসে বিরোধীরা। ১০ জনপথে সনিয়া গাঁধীর বাসভবনে একাধিক বিরোধী দলের প্রথম সারির নেতাদের মেগা বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন রাহুল গাঁধী-শরদ পাওয়ার-সঞ্জয় রাউত-ফারুখ আবদুল্লারা। কিন্তু, সূত্রের খবর, বিরোধীদের মেগা বৈঠকে ডাকাই হল না তৃণমূলকে। এই ঘটনায় ফের একবার কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভাঙন প্রকাশ্য চলে এল। 


কয়েকদিন আগেই মুম্বইয়ে গিয়ে শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ’র অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন,  ইউপিএ বলে কিছু আছে না কি? কিছু নেই। 


পাল্টা কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছিল একদা বিজেপির দীর্ঘ দিনের শরিক বাল ঠাকরের শিবসেনা। তারা বলেছিল, কংগ্রেসকে ছাড়া জোট অসম্পূর্ণ। এরপরই গোয়ায় কংগ্রেসের পর এনসিপিতেও ভাঙন ধরিয়েছে তৃণমূল।


আর এই আবহেই দশ জনপথে রাহুল গান্ধীর উপস্থিতিতে বৈঠক করলেন বিভিন্ন বিরোধী দলের হেভিওয়েটরা। আর অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণভাবেই, এর আগে কংগ্রেসের নেতৃত্বে একাধিক কর্মসূচি থেকে দূরত্ব রেখে চলা তৃণমূলকে, এবার আর ডাকাই হল না।


বৈঠকে রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি ছিলেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় রাউত,ডিএমকে’র শীর্ষ নেতা টি আর বালু,ন্যাশনাল কনফারেন্সের শীর্ষ নেতা ফারুখ আবদুল্লা।


বিরোধীদের এই বৈঠকে ছিল না তৃণমূল,অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি,মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। এ ব্যাপারে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, অনেক দলই যায়নি। শরদ পাওয়ার মনে করছেন, ওখানে যাবেন গেছেন। 
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এই ঘটনায় তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছেন। 


বাদল অধিবেশনে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে, শীতকালীন অধিবেশনের শুরুর দিন, ১২জন বিরোধী সাংসদকে গোটা অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করেছেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। যার প্রতিবাদে লাগাতার ধরণা দিচ্ছে বিরোধীরা।সাংসদদের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে রণকৌশল স্থির করতে, মঙ্গলবার সংসদে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বৈঠকে বসে একাধিক বিরোধী দল।


কিন্তু, এই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিল তৃণমূলজিরো আওয়ারে ওয়েলে নেমে বিরোধী সাংসদরা যখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তখন নিজেদের আসনেই ছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে একসঙ্গে যাওয়ার পথ নেই। সেই পথ কংগ্রেসই বন্ধ করেছে। 


এরপর রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করে বিরোধীরা। গাঁধী মূর্তির সামনে শুরু হয় ধর্না। তাতে যোগ দেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী, শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত ও সাসপেন্ডেড বিরোধী সাংসদরা। ধর্নায় ছিলেন তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন।এরপর একযোগে মিছিল করে বিজয়চক পর্যন্ত যায় বিরোধীরা। উপস্থিত ছিলেন রাহুল গাঁধী। তিনি বলেন, বিরোধীরা মুখ খুললেই সাসপেন্ড। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার প্রশ্ন করতেই দিচ্ছে না।  ১৩ দিন হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী সংসদে আসেননি। এটি কোনও পদ্ধতি নয়। 


তৃণমূলের সাসপেন্ডেড রাজ্যসভা সাংসদ দোলা সেন বলেছেন, গাধী মূর্তির সামনে দু’সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করেছি। সরকার আমাদের কথা শুনছে না। এবার  আগামীতে আরও কর্মসূচি নেব। 


যদিও মোদি সরকারের দাবি, তারা আলোচনায় চাইলেও, এড়িয়ে যাচ্ছে বিরোধীরাই।সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেছেন,  আমরা কথা বলতে চাই। তারপরও বিরোধীরা বয়কট করছে। ভুল থাকার পরও যুক্তি দিচ্ছে বিরোধীরা। আবার বলছি যোগ দিন। 


লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে, কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ততই কোন পথে এগোয়, সেদিকেই নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।