নয়াদিল্লি: গত পাঁচ দশকে দেশে বেকারত্বের হার সর্বোচ্ছে পৌঁছেছে বলে সামনে এসেছে। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই আগামী দেড় বছরে ১০ লক্ষ সরকারি কর্মী নিয়োগের ঘোষণা করল প্রধানমন্ত্রীর দফতর (PMO)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) নিজে সব বিভাগ এবং মন্ত্রকের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং দেড় বছরের মধ্যে ১০ লক্ষ সরকারি পদে নিয়োগের কাজ সেরে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। কিন্তু এই ঘোষণায় কেন্দ্রকেই পাল্টা বিঁধেছেন বিরোধীরা। তাঁদের সাফ যুক্তি, ২০১৪-য় বছরে ২ কোটি করে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদি। সেই নিরিখে গত আট বছরে ১৬ কোটি বেকার ছেলেময়ের চাকরি হওয়া উচিত ছিল। তার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি কেন্দ্র। এখন ১০ লক্ষ পদে নিয়োগের ঘোষণা করে কেন্দ্র মুখরক্ষা করতে চাইছে বলে দাবি বিরোধীদের। 


প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ঘোষণ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন 


প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এই ঘোষণায় কার্যতই বাক্যহারা অর্থনীতিবিদ সৈকত সিনহা রায়। এবিপি আনন্দকে ফোনে তিনি বলেন, "কোথা থেকে চাকরি হবে, আমি বুঝে উঠতে পারছি না। দেশের অর্থনীতির যা অবস্থা, জিডিপি যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে কর্মসংস্থানের জায়গা নেই। জিডিপি বাদ রেখে অনেক সময় সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ সম্ভব। কিন্তু ১৯৯১ থেকে সরকারি দফতরে কর্মসংস্থান লাগাতার কমানো হয়েছে। প্রচুর পদ ছেঁটে ফেলা হয়েছে রেলে। কোন দফতরে, কত নিয়োগ হবে, কিছু বুঝতে পারছি না। এখন অর্থনীতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে, বেসরকারি সংস্থাতেই চাকরি হতে পারে। তবে এখন সেই পরিস্থিতিও নেই। শিল্প, পরিষেবা, সব ক্ষেত্রে একই অবস্থা। আমার তো আশঙ্কা, দেড় বছর পর সিংহের মুষিক প্রসব না হয়ে যায় ব্যাপারটা। কারণ ২০২৪-এ নির্বাচন। এটা গিমিক ছাড়া কিছু নয়। দেশে কোনও বড় বিনিয়োগ নেই, না দেশি, না বিদেশি। তাই কর্মসংস্থানের জায়গা নেই। আমি তো এই মুহূর্তে একটাই কর্মসংস্থানের জায়গা দেখতে পাচ্ছি, তা হল প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদে শিবলিঙ্গ খোঁজার চাকরি পেতে পারেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।"


এ নিয়ে মোদি সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরাও। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা মঙ্গলবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন। তিনি বলেন, "এ ৯০০ ইঁদুর খেযে বিড়ালের হজয়যাত্রা আর কী! ৫০ বছরে বেকারত্ব সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। টাকার দাম সর্বনিম্নে এসে ঠেকেছে। আর ট্যুইটার ট্যুইটার খেলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন প্রধানমন্ত্রী।"


আরও পড়ুন: PMO on Recruitment: আগামী দেড় বছরে ১০ লক্ষ চাকরি, নির্দেশ মোদির


সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তো বছরে ২ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল! সেই অর্থে আট বছরে ১৬ কোটি চাকরি হয়। সেই গল্প চলে গেল। সরকারি সংস্থাগুলির এক এক করে বেসরকারিকরণ হচ্ছে।  বিএসএনএল-এর মতো সংস্থাকে প্রায় তুলে দেওয়া হয়েছে। রেলের পরীক্ষা কোথায় চলে গিয়েছে। গত এক সপ্তাহেই ৭০ হাজার চাকরি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই এই দাবি কি বিশ্বাসযোগ্য আদৌ? বছরে ২ কোটি বলেছিলেন, এখন দেড় বছরে ১০ লক্ষ বলছেন। ২০২৪-এ ভোট। ধরা পড়ে যাবেন বলেই কি! ভোটের পর আবার ভুলে যাবেন আমার বিশ্বাস। বাজার গরম করার জন্য এখন এ সব বলছেন।"


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: সামনেই উপনির্বাচন, আজ ত্রিপুরায় পথসভা অভিষেকের


একই সুর শোনা যায় তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের গলায়। তিনি বলেন, "বছরে ২ কোটি চাকরি হবে বলেছিলেন। আট বছর হয়ে গেল, ১৬ কোটি বেকারের চাকরি হয়নি। তাই এই ঘোষণার নিশ্চয়তা কী! আমার তো ভরসা নেই।" 


বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র


যদিও বাংলার বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার কথায়, "কংগ্রেস দেশ লুঠ করেছে। দেশের ভাণ্ডার শূন্য করে দিয়েছে। মনমোহন সিংহের ১০ বছরের শাসনে য দুর্নীতি হয়েছে, সমস্ত প্রদেশ, দেশ মিলিয়ে তার নজির নেই। প্রতি সাত দিন অন্তর দুর্নীতি হতো। মোদিজি আসার পর দেশের অর্থনীতি অনেক মজবুত। গোটা বিশ্বে একমাত্র ভারতের অর্থনীতিই এগোচ্ছে। ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি, কুটির শিল্প,  লোকাল টু গ্লোবাল, মেক ইন ইন্ডিয়া, স্টার্টআপ ইন্ডিয়া যুগান্তকারী সাফল্য এনে দিয়েছে। মোদিজি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। তাতেই কংগ্রেস এবং অন্য দলগুলি জ্বালা হচ্ছে। কারণ তাদের লোক ঠকানির রাজনীতি আর চলবে না।"