জয়পুর: আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল কয়েক দিন ধরেই। আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হল রাজস্থানে (Rajasthan Congress Crisis)। সেখানে ৮০ জন কংগ্রেস বিধায়ক ইস্তফা দিলেন (Congress)। ইস্তফা দিলেন কংগ্রেস সরকারের সমর্থন দুই নির্দল প্রার্থীও। রাজস্থান কংগ্রেসের তরফে এমনই খবর মিলেছে। ইস্তফা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের (Ashok Gehlot) বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন সকলে। বিক্ষুব্ধরা সকলেই গহলৌত সমর্থক। সচিন পায়লটের (Sachin Pilot) বিরোধিতা করেই ইস্তফা সকলের। যদিও তাঁদের তাতিয়ে তোলার পিছনে গহলৌতের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের। 


রাজস্থান কংগ্রেসে তীব্র সঙ্কট, ইস্তফা ৮২ জন বিধায়কের


আসন্ন কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের আগে এই পরিস্থিতিতে টালমাটাল অবস্থা কংগ্রেসের। রাজস্থানে তাদের সরকার পড়ে যাওয়াও অসম্ভব নয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আপাতত বিধানসভার স্পিকারের কাছে ইস্তফা জমা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা। স্পিকার ইস্তফাপত্র গ্রহণ করে কি না তার উপর সবকিছু নির্ভর করছে।  কিন্তু যদি রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্রের কাছে যান বিক্ষুব্ধরা এবং তিনি ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেন, সে ক্ষেত্রে নতুন করে নির্বাচন হলে কংগ্রেস আদৌ রাজস্থানে সরকারে ফিরবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ ইতিহাস বলছে, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর রাজস্থানে সরকার বদল হয়ে এসেছে এ যাবৎ। 

 

তবে রাজস্থানে নতুন করে কংগ্রেসে সঙ্কট দেখা দেওয়ায়, নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। কারণ অশোক গহলৌত বনাম সচিন পায়লট শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নচুন কিছু নয়। এর আগে, ২০২০ সালেও গহলৌত এবং পায়লটের মধ্যে সংঘাত দেখা দেয়। সে বার মধ্যস্থতা করতে হয় রাহুল গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে। কিন্তু কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন ঘিরে সেই দ্বন্দ্ব আরও একবার প্রকট হয়ে উঠল। 

 

আসন্ন কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন গহলৌত। কিন্তু দলে এক ব্যক্তি, এক পদ চালু করতে বদ্ধপরিকর রাহুল। সে ক্ষেত্রে একসঙ্গে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেস সভাপতি পদে টিকে থাকা সম্ভব নয় গহলৌতের পক্ষে। যে কোনও একটি পদ ছাড়তে হবে তাঁকে। তাই গহলৌত রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়লে, তাঁর জায়গায় পায়লটকে মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে বলে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাতেই আপত্তি বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস বিধায়ক-নেতাদের। 

 


 

রবিবার জয়পুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়ার দিকেই ইঙ্গিত দেন গহলৌত। তার পরই পরিস্থিতি দ্রুত অন্য দিকে ঘুরে যায়। রবিবার বিকেলে বিধায়ক শান্তি ধরিওয়ালের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠক করেন ওই বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়করা। সেখানে সচিনের বিরুদ্ধে একযোগে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানা গিয়েছে। রাজস্থান কংগ্রেস সূত্রে খবর, ২০২০ সালে সচিন খোদ গহলৌতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বিজেপি-র আগ্রাসনের সামনে দলে টালমাটাল অবস্থা তৈরি করেন তিনি। তাই বিদ্রোহীদের যুক্তি, সঙ্কটের সময় যিনি দলের পাশে থাকেননি, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। বরং যাঁরা বিপদে দলের পাশে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই কাউকে বেছে নিতে হবে। 

 

সচিন পায়লটের বিরোধিতায় বিদ্রোহ ঘোষমা গহলৌতপন্থীদের

 

এ দিনের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এক নির্দল প্রার্থী। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, "বিধায়কদের মতামতের নিরিখে সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে, সরকার চলবে কী করে? সরকার পড়ে যেতে বাধ্য।" এই পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধেয় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক বসে। সেখানে মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অজয় মাকেন ছিলেন। এ দিন জয়সলমীরেই ছিলেন গহলৌত। জয়পুরে খড়্গে এবং মাকেনের সঙ্গে একদফা মতবিরোধও হয় তাঁর। হোটেলের বৈঠক ছেড়ে বাড়ি রওনা দেন তিনি। 

 

এর পরই কংগ্রেস নেতারা বাসে চেপে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করতে রওনা দেন। ধরিওয়ালের বাড়িতেই ইস্তফাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। মোট ৯২ জন ইস্তফা দিতে চলেছেন বলে জানা যায় প্রথমে। শেষ মেশ ৮২ জন ইস্তফা দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এই মুহূর্তে রাজস্থানে রয়েছেন মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং অজয় মাকেন। কেসি বেণুগোপালও যোগাযোগ রাখছেন সকলের সঙ্গে। পরিস্থিতি থিতিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।