চণ্ডীগড়: তারকা গায়ক নন শুধু, জাতীয় রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক নেতাও। দিনে-দুপুরে এ ভাবে খুন হতে হল তাঁকে, এখনও তা বিশ্বাস হচ্ছে না কারও। তাই পঞ্জাবের তারকা গায়ক সিধু মুসেওয়ালার (Sidhu Moose Wala) খুনের ঘটনায় স্তম্ভিত রাজনৈতিক মহল থেকে বিনোদন জগৎ (Punjab Murder)। তবে যে বিষয়টি সকলকে নাড়া দিচ্ছে, তা হল, সুদূর কানাডায় বসে ছক কষে সিধুকে হত্যার বিষয়টি। গ্যাংস্টার গোল্ডি বরার (Goldy Barad) দেশের বাইরে থেকে গোটা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই তিনি খুনের দায় স্বীকার করেছেন বলে দাবি পঞ্জাব পুলিশের। গোল্ডির স্বীকারোক্তি স্বরূপ একটি ফেসবুক পোস্টও তুলে ধরেছে তারা।
দিনে-দুপুরে খুন পঞ্জাবের গায়ক-নেতা
রবিবার পঞ্জাবের (Punjab) মানসা জেলায়, নিজের গ্রাম জাওয়ারে খুন হয়েছেন সিধু। অন্য দিন বুলেটপ্রুফ গাড়ি নিয়ে বেরোলেও, এ দিন মহিন্দ্রা থর জিপ নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। চালকের আসনে ছিলেন নিজেই। সঙ্গে ছিলেন দুই বন্ধু। পঞ্জাব পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তায় তিন দিক থেকে তিনটি গাড়ি এসে সিধুকে ঘিরে ফেলে। তার পর এলোপাথাড়ি সাত রাউন্ড গুলি চালানো হয় তাঁকে লক্ষ্য করে। আত্মরক্ষার কোনও সুযোগই পাননি সিধু। গাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর। গুলিবিদ্ধ হন তাঁর দুই বন্ধুও।
সিধুর মৃত্যুতে পঞ্জাব সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কারণ কংগ্রেস নেতা সিধু বেশ কিছু দিন ধরেই মাফিয়াদের কাছ থেকে হুমকি পাচ্ছিলেন। সে কথা সরকারকে জানিয়েওছিলেন। তাতে চার জন বন্দুকধারী দেহরক্ষী নিযুক্ত করা হয় তাঁর জন্য। কিন্তু ভিভিআইপি সংস্কৃতিতে ইতি টানতে শনিবার ৪২৪ জনকে দেওয়া নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে পঞ্জাব সরকার। সরকারের তরফে প্রকাশিত সেই তালিকায় নাম ছিল সিধুরও। প্রাণনাশের হুমকি পাওয়া ব্যক্তির নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র বাহবা কুড়োনোর জন্যই প্রকাশ করা হয় বলে দাবি বিরোধীদের। তাই সিধু খুনের দায় পঞ্জাব সরকারের ঘাড়েই চাপিয়েছেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান যদিও কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Punjabi Singer Dead: পঞ্জাবে তারকা কংগ্রেস নেতাকে গুলি করে খুন, এক দিন আগেই কমানো হয় নিরাপত্তা
সিধু খুনে গ্যাংস্টারের স্বীকারোক্তি!
কিন্তু কানাডায় থাকা গ্যাংস্টার কী ভাবে গোটা বিষয়টি পরিচালনা করল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ফেসবুকে গোল্ডি জানিয়েছেন, তাঁর সহযোগীর হত্যা মামলায় সিধুর নাম জড়িয়েছিল। প্রতিশোধস্বরূপই সিধুকে হত্যা করিয়েছেন তিনি। গোল্ডির এই দাবি নিয়ে পুলিশ সূত্রে যে তথ্য সামনে এসেছে, তা হল, ২০২১ সালে গ্যাংওয়ারে ভিকি মিদদুখেড়া নামের স্থানীয় একজনকে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। ধৃতরা পুলিশকে শার্প শ্যুটার সজ্জন সিংহ ওরফে ভোলুর নাম জানায়। এর পাশাপাশি অনিল কুমার ওরফে লাট্টু, অজয় কুমার ওরফে সানি কৌশলের নামও সামনে আসে।
ওই হত্যা মামলায় পঞ্জাবের এক নামী গায়কের ম্যানেজারেরও হাত ছিল বলে সেই সময় পুলিশকে জানায় ধৃতরা। সূত্রের খবর, ওই ম্যানেজার আর কেউ নন, সিধুরই ম্যানেজার। তাই ওই হত্যা মামলায় সিধুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নিহত ভিকি আবার স্থানীয় গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল কানাডার গোল্ডিরও। ভিকির খুনের বদলা নিতেই লরেন্সের লোকজন সিধুকে খুন করেছে বলে ধারণা পুলিশের। তবে লরেন্সের লোকজন খুন করলেও, গোটা বিষয়টি কানাডা থেকে গোল্ডিই পরিচালনা করেছেন বলে দাবি পঞ্জাব পুলিশের। লরেন্সের সঙ্গে হাত মিলিয়েই কানাডায় বসে ভারতের দিল্লি, রাজস্থান, পঞ্জাব এবং হরিয়ানা জুড়ে গোল্ডি মাফিয়া কাজকর্ম পরিচালনা করেন বলে দাবি তাদের।