নয়াদিল্লি: গুজরাতে (Gujarat) দেশের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা গড়ায় অনুমোদন পেয়েছে মুকেশ আম্বানির সংস্থা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ। আইনি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই তাদের এই বেসরকারি চিড়িয়াখানা গড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তার জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় আদালতে। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের পরদিন অর্থাৎ ১৫৬ অগাস্ট সেই মামলা খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। মামলার কোনও সারবত্তা নেই বলে জানিয়েছে বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী এবং কৃষ্ণ মুরারির ডিভিশন বেঞ্চ।
আম্বানিদের চিড়িয়াখানার বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ
গুজরাতের জামনগরে ‘গ্রিনস জুলজিক্যাল রেসকিউ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’ নামে দেশের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা গড়তে চলেছে রিলায়্যান্স। সেখানে দেশ-বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা পশু-পাখি-সহ বিভিন্ন প্রাণীকে রাখা হবে যেমন, তেমনই প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা পশু-পাখি এবং প্রাণীর পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবেও ‘গ্রিনস জুলজিক্যাল রেসকিউ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা তাদের লক্ষ্য বলে জানায় রিলায়্যান্স।
রিলায়্যান্সের এই চিড়িয়াখানার অনুমোদন পাওয়ার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী কানহাইয়া কুমার। তাঁর অভিযোগ ছিল, দেশ-বিদেশ থেকে পশু-পাখি সংগ্রহের কোনও এক্তিয়ারই নেই ‘গ্রিনস জুলজিক্যাল রেসকিউ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’-এর। আসলে বাণিজ্যিক স্বার্থ চরিতার্থ করাই উদ্দেশ্য রিলায়্যান্স সংস্থার। তাই তাদের দেওয়া অনুমোদনপত্র পুনর্বিবেচনা করা হোক। একই সঙ্গে রিলায়্যান্সের চিড়িয়াখানার ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্তের জন্য সিট গঠনের আবেদনও জানান তিনি।
কিন্তু জনস্বার্থ মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আদালতের দাবি, ‘গ্রিনস জুলজিক্যাল রেসকিউ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’ (Greens Zoological Rescue and Rehabilitation Centre) একটি স্বীকৃতপ্রাপ্ত সংস্থা। মামলাকারীর নিজের এ ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান নেই। শুধুমাত্র খবর দেখেই মামলা দায়ের করেছেন তিনি। জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ যেখানে তদারকি করছেন এবং তাতে কোনও ফাঁক ফোকর ধরা পড়েনি। সে ক্ষেত্রে এই ধরনের জনস্বার্থ মামলা যুক্তিহীন।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রিলায়্যান্সকে গুজরাতের জামনগরে ‘গ্রিনস জুলজিক্যাল রেসকিউ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’ গড়ে তোলায় অনুমোদন দেয় জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। রিলায়্যান্স জানায়, মেক্সিকোর সান পেদ্রো গার্জা গার্সিয়া, নুয়েভো লিয়ঁ থেকে ১৭টি বিরল প্রজাতির ২৮৬টি প্রাণী আনা হবে, যার মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রজাতির ৫০টি বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, আমেরিকান ফ্লেমিঙ্গো, জায়ান্ট অ্যান্টেএটার, ১২টি আফ্রিকান চিতা,১০টি জাগুয়ার, মেক্সিকোর খাটো শজারু, ব্ল্যাক বেয়ার, ববক্যাট, আটটি ব্রাউন বেয়ার, মারগেজ, কুগার, দুই আঙুল বিশিষ্ট শ্লথ।
কিন্তু শুরু থেকেই এই চিড়িয়াখানা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠন (International Union for Conservation of Nature) –এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাঘ ‘বিপন্ন’ প্রাণী হিসেবেই চিহ্নিত। আফ্রিকান চিতা, জায়ান্ট অ্যান্টেএটার ‘অসুরক্ষিত’ এবং জাগুয়ার ‘বিলুপ্ত প্রায়’ প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। সেই নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই জুনাগড়ের সাক্কারবাগ চিড়িয়াখানা থেকে দফায় দফায় মোট ৬০টি চিতা সরিয়ে রিলায়্যান্সকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৮৬৩ সালে জুনাগড়ের চিড়িয়াখানাটি তৈরি করেন তৎকালীন নবাব দ্বিতীয় মহব্বত খানজি। ২০৭ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ওই চিড়িয়াখানা এশিয়াটিক লায়ন, বুনো গাধা, এশিয়াটিক চিতা, চিঙ্কারা হরিণ প্রতিপালন কেন্দ্র।
এ ছাড়াও অসম সরকারের চিড়িয়াখানা থেকে একজোড়া ব্ল্যাক প্যান্থার তুলে দেওয়া হয়েছে রিলায়্যান্সের হাতে। তার বদলে ইজরায়েল থেকে আনা চারটি জেব্রা অসম চিড়িয়াখানাকে দেয় তারা। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, রিলায়্যান্সের হাতে ব্ল্যাক প্যান্থার তুলে দেওয়া নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায় অসমের চিড়িয়াখানা সুরক্ষা মঞ্চ। কারণ দেশের মধ্যে একমাত্র অসম চিড়িয়াখানাতেই ব্ল্যাক প্যান্থার প্রতিপালন করা হয়। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার বৈশ্য বলেন, “জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের বিধি অনুযায়ী. শুধুমাত্র সরকারি চিড়িয়াখানাগুলির মধ্যেই পশু-পাখির হস্তান্তর চলতে পারে। এই সংক্রান্ত নিয়ম লিপিবদ্ধও রয়েছে। জামনদগরে আম্বানিদের চিড়িয়াখানাটি বেসরকারি। এক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে।” কংগ্রেসের তরফেও এ নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। ২০০৯ সালের চিড়িয়াখানা আইনেও সরকারি এবং বেসরকারি চিড়িয়াখানার মধ্যে পশু হস্তান্তরের উল্লেখ নেই।
অসম থেকে ব্ল্যাক প্যান্থার তুলে আম্বানিদের চিড়িয়াখানায়!
রিলায়্যান্স সূত্রে জানা গিয়েছে, জামনগরে চিড়িয়াখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা আসলে মুকেশ-পুত্র অনন্ত আম্বানির। ২৫০.১ একর জমি জুড়ে তৈরি হবে চিড়িয়াখানাটি। শুরুতে বলা হয়, বিশ্বের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা গড়ে তুলছে রিলায়্যান্স। কিন্তু ভারতেও ওই চিড়িয়াখানা বৃহত্তম নয়। ৩ হাজার একর জমিতে বিস্তৃত তিরুপতির 'দ্য শ্রীলঙ্কা বেঙ্কটেশ্বর জুলজিক্যাল পার্ক'ই দেশের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা। চেন্নাইয়ের 'আরিনগর আন্না জুলজিক্যাল পার্ক', ভুবনেশ্বরের 'নন্দনকানন বায়োলজিক্যাল পার্ক', গুয়াহাটির 'অসম স্টেট জু কাম বটানিক্যাল গার্ডেন', হায়দরাবাদের 'নেহরু জুলজিক্যাল পার্ক', বিশাখাপত্তনমের 'ইন্দিরা গাঁধী জুলজিক্যাল পার্ক', মহীশূরের 'শ্রী চমরাজেন্দ্র জুলজিক্যাল গার্ডেন্স'ও আয়তনে রিলায়্যান্সের নির্মীয়মাণ চিড়িয়াখানার থেকে বড়।