জয়পুর: গোহত্যা দেখলেই হত্যা। জামিনের ব্যবস্থা করবেন তাঁরা। ক্যামেরার সামনেই ঘোষণা রাজস্থানের বিজেপি (BJP) বিধায়ক জ্ঞানদেব আহুজার (Gyan Dev Ahuja)। শুধু তাই নয়, স্বগোষিত গোরক্ষকদের হাতে রাজস্থানে পিটিয়ে মারার ঘটনা নিয়েও কার্যত আস্ফালন করতে দেখা গেল তাঁকে। তাঁর বক্তব্য, "লালাওয়ান্দি হোক বা বেহরোর, এখনও পর্যন্ত পাঁচজনকে খুন করেছি আমরা।" জ্ঞানদেবের ওই 'স্বীকারোক্তি'র ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও (Mahua Moitra) ভিডিওটি তুলে ধরেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় (Cow Vigilante Violence)। 


ক্যামেরার সামনেই খুনের 'স্বীকারোক্তি' বিজেপি নেতার


যে লালাওয়ান্দি এবং বেহরোরের কথা বলতে শোনা গিয়েছে জ্ঞানদেবকে। তাতে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে রাকবর খান এবং পেহলু খানকে পিটিয়ে (Pehlu Khan Murder) মারার ঘটনার কথা মনে পড়ে গিয়েছে সকলের।  বিজেপি ক্ষমতায় থাকাকালীন রাজস্থানের রামগড়ের বিধায়ক ছিলেন জ্ঞানদেব। বাকি তিনটি খুনের দাবি যদি সত্য হয়, সেগুলি কোথায় ঘটেছে, জানাননি জ্ঞানদেব।  


পেহলু খান হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছ'জনই ২০১৯ সালে মুক্তি পেয়ে যান। রাজ্যের বর্তমান কংগ্রেস সরকার তার বিরুদ্ধে আবেদন জানালেও, এখনও পর্যন্ত হাইকোর্টে তা গৃহীত হয়নি। এখনও রাকবর খান হত্যা মামলার শুনানি চলছে আদালতে। জ্ঞানদেবের বক্তব্য, "আমি তো কর্মীদের খুনের জন্য ছাড় দিয়েই রেখেছি। ওদের ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের। জামিন আমরাই দেখে নেব।"


শনিবার জ্ঞানদেবের ওই ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩-এ ধারায় জ্ঞানদেবের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ দায়ের হয়েথে। এর আগেও এমন মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। খুনিদের 'দেশপ্রেমী', 'ছত্রপতি শিবাজি এবং গুরু গোবিন্দ সিংহের প্রকৃত উত্তরাধিকার' বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 



আরও পড়ুন: Cow Vigilante Violence: 'কর্মীদের ছাড় দিয়ে রেখেছি, পাঁচজন খুন করেছি', পেহলু-হত্যার প্রসঙ্গ টেনে আস্ফালন বিজেপি নেতার


জ্ঞানদেবের নয়া মন্তব্য থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছে আলওয়ারের বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, জ্ঞানদেব নিজের মতামত জানিয়েছেন। দলের চিন্তা-ভাবনা ওঁর থেকে আলাদা। সমালোচনার মুখে পড়ে সুর নরম করলেও, জ্ঞানদেব বলেন, "গরুপাচার এবং গোহত্যায় যুক্ত কেউ রক্ষা পাবে না।" খুনের দাবি নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, "আমি শুধু বলেছি. পাঁত জন মুসলিম যাঁরা গরুপাচার করছিলেন, আমাদের কর্মীরা তাঁদের মারধর করেছে।"


জ্ঞানদেবের ওই ভিডিও ট্যুইটারে পোস্ট করেন মহুয়া। তিনি লেখেন, 'এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনকে মেরেছি আমরা। কার্যকর্তাদের ছাড় দিয়ে রেখেছি... মেরে ফেলতে। গোঁফধারী বিজেপি-র এই দানব পাঁচ জনকে পিটিয়ে মারা নিয়ে আস্ফালন করছে। অনিষ্টকারীর যদি চেহারা থাকে, তাহলে এটাই। '


রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিংহ দোস্তারাও ভিডিওটি শেয়ার করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনি লেখেন, "বিজেপি-র সন্ত্রাস এবং ধর্মান্ধতার আর কোন প্রমাণ চাই? বিজেপি-র আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে।"


স্বঘোষিত গোরক্ষকদের হাতে খুন হন পেহলু খান, রাকবর খান


২০১৭-র এপ্রিল মাসে ৫৫ বছর বয়সি পেহলু খানকে পিটিয়ে মারা হয় লাবেহরোরে। লালওয়ান্দিতে ২০১৮-র জুলাই মাসে পিটিয়ে মারা হয় ২৮ বছরের রাকবর খানকে। তাঁরা দু'জনেই আদতে হরিয়ানার বাসিন্দা। মেও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। দুধের ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। গরু বিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের পিটিয়ে মারা ফেলে স্বঘোষিত গোরক্ষকরা। 


সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওয় ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে মাটিতে ফেলে এলোপাথাড়ি লাথি মারতে দেখা গিয়েছিল হামলাকারীদের। তার পরেও অভিযুক্ত ছ'জন আদালতে মুক্তি পেয়ে যান। প্রমাণের অভাবে তাঁদের ছেড়ে দেয় আদালতে। কংগ্রেস সরকার আদালতের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন জানালেও, রাজস্থান হাইকোর্টে তাদের আবেদন পড়ে রয়েছে। রাকবর খান খুনের মামলা এখনও আদালতে। পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কে করছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।