পটনা: ফাটল যে চওড়া হচ্ছে, গত কয়েক মাস ধরেই তা নিয়ে শোনা যাচ্ছিল কাানঘুষো। বিহারে (Bihar Politics) বিজেপি-র (BJP) সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের (Nitish Kumar) জোট সরকারের অবস্থা টালমাটাল বলে এ বার সামনে আসছে। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) নীতি আয়োগ বৈঠকে যেখানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন, তা এড়িয়ে গিয়েছেন নীতিশ। শরীর ভাল যাচ্ছে না বলে যদিও নীতিশের দল সংযুক্ত জনতা দল অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করেছে, কিন্তু মঙ্গলবার দলের বিধায়ক-সাংসদদের নিয়ে নীতীশের ডাকা বৈঠক ছন্দপতনেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তা নিয়ে সরগরম বিহার তো বটেই দিল্লির রাজনীতিও (Bihar Alliance)।
বিহারে বিজেপি-র সঙ্গে জোট নিয়ে অসন্তোষ নীতীশের!
গত বিধানসভা নির্বাচনে তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে এলেও, শরিক দল বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে নীতীশই সরকার গড়েন। এমনকি সংখ্যায় তাঁর দল JD(U) পিছিয়ে থাকলেও, নীতীশকেই প্রধানমন্ত্রী করা হয় বিহারের। তার পর থেকেই লাগাতার বিজেপি-র সঙ্গে নীতীশ এবং তাঁর দলের দ্বন্দের কথা সামেন এসেছে। নীতীশকে নামমাত্র মুখ্যমন্ত্রী করে রেখে, বিজেপি-ই সবকিছু পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে বহু বার। শরিক হিসেবে সংসদে নীতীশের দলের কাউকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দিতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা। কিন্তু বিহারে জোটে থাকলেও, কেন্দ্রে বিজেপি-র মন্ত্রিসভায় তাঁর দলের কাউকে পাঠানো হবে না বলে সেই সময় সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন নীতীশ।
কিন্তু এ বছর জুলাই মাসে নীতীশের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেই বিজেপি-র দেওয়া রাজ্যসভা আসন গ্রহণ করেন আরসিপি সিংহ। গত বছর মোদির মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার আগেও তিনি নীতীশের সঙ্গে পরামর্শ করেননি বলে জানা যায়। এর পর, শনিবার নীতীশের দলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন সিংহ। নীতীশ রাজ্যসভার জন্য তাঁর নাম সুপারিশ না করাতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে সূত্র মারফত সামনে এসেছে। তবে তাতেই থামেননি তিনি। বলেন, ‘‘সাত জন্মেও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না নীতীশ কুমার। আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে যাই যদি, সেই আশঙ্কাতেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ঈর্ষার কোনও ওষুধ নেই।’’ নীতীশের সংযুক্ত জনতা দল ডুবতে বসেছে বলেও মন্তব্য করেন সিংহ।
আরও পড়ুন: NITI AYOG Meeting: আজ নীতি আয়োগের বৈঠক, জাতীয় শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন-সহ একাধিক বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা
এর পাল্টা, রবিবার সিংহকে একহাত নেন সংযুক্ত জনতা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজীব রঞ্জন সিংহ ওরফে লালন। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে হবে কেন? ২০১৯ সালেই মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শামিল হব না আমরা।’’ শুধু তাই নয়, আগামী দিনেও দলের কোনও সদস্য মোদি সরকারের মন্ত্রিসভায় শামিল হবেন না বলে জানান রাজীব। এমন মন্তব্য করে রাজীব আসলে নীতীশের বার্তাই তুলে ধরেছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, জোটের ফাটল কোনও ভাবেই জোড়া লাগানো সম্ভব নয় বলেও শোনা যাচ্ছে। তাই মঙ্গলবার দলের বিধায়ক-সাংসদদের সঙ্গে নীতীশের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে সকলে।
প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকও এড়ালেন নীতীশ
এর আগে, লালু এবং তাঁর দল ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকার ভেঙে দিয়ে রাতারাতি বিজেপি-র হাত ধরে বিহারে সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে লালু এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে তিক্ততা দূর করতে উদ্যোগী হতে দেখা গিয়েছে নীতীশকে। তাই রীতিমোত পরিকল্পনা করেই নীতীশ বিজেপি-র উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। দলের একটি সূত্রের দাবি, বিহার বিধানসভার স্পিকার তথা বিজেপি নেতা বিজয়কুমার সিংহকে একেবারেই না পসন্দ নীতীশের। দু’জনের মধ্যে যে একেবারেই বনিবনা নেই, সে কথা অগোচরে নেই কারও। তাই জোটের ফাটলকে সামনে রেখে তাঁকে সরানোও কৌশল হতে পারে নীতীশের।