পানাজি: বিপদে আপদে এত দিন পরস্পরের পাশে থাকতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু গোয়ায় তৃণমূলের সক্রিয়তাকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ আম আদমি পার্টির (Aam Aadmi Party/AAP) অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। বরং জানিয়ে দিলেন, আসন্ন গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে (Goa Assembly Election 2022) আসন্ন তৃণমূলের (TMC) জয়ের কোনও সম্ভাবনাই দেখতে পাচ্ছেন না তিনি।
গোয়ার নির্বাচনে নাম লিখিয়েছে কেজরিওয়ালের আপও। বুধবার পানাজিতে গোয়াবাসীকে দুর্নীতিমুক্ত সরকার গড়ার প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা যায় তাঁকে। দিল্লিতে নিজের সরকারের উদাহরণ টেনে জানিয়েছেন, গোয়ায় ক্ষমতায় এলে দুর্নীতির ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েই চলবে তাঁর দল।
কিন্তু গোয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের রণকৌশল নিয়ে কী ভাবছেন জানতে চাইলে, কোনও রাখঢাকই করেননি কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, তৃণমূলকে একটু বেশিই গুরুত্ব দিয়ে ফেলছেন আপনারা।এই মুহূর্তে গোয়ায় ১ শতাংশও জনসমর্থন নেই তৃণমূলের। মাত্র তিন মাস আগে গোয়ায় এসেছে তৃণমূল। গণতন্ত্র এ ভাবে চলে না। তার জন্য পরিশ্রম দরকার। মানুষের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়।গোয়ায় তৃণমূলকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মতে, ওদের জেতার কোনও সম্ভাবনাই নেই।”
কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে স্বার্থসংঘাতই হোক বা ক্ষমতা নিয়ে দড়ি টানাটানি, গত কয়েক বছরে তৃণমূল এবং আপ পরস্পরের পাশেই থেকেছে। ২০১৯ –এর লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে কলকাতার ব্রিগেডে পর্যন্ত এসেছিলেন কেজরিওয়াল। ২০২১-এ মমতা তৃতীয় বার বাংলায় মসনদে ফেরার পর, বিজেপি-কে দুরমুশ করার জন্য মমতাকে অভিনন্দনও জানান তিনি।
কিন্তু এ বার গোয়ায় সেই তৃণমূলকেই কটাক্ষ করতে দেখা গেল কেজরিওয়ালকে। তৃণমূল যদিও তাঁর মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের সাংসদ সৌগত রায় (Saugata Roy) বলেন, “কেজরিওয়াল ওঁর নিজের মতামত জানিয়েছেন। এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। দলই প্রতিক্রিয়া জানাবে। কেজরিওয়ালের কথায় ভরসা করে আমরা চলি না। দল সঙ্ঘবদ্ধ। গোয়ায় শক্তি ক্রমশ বাড়ছে। রোজই বড় বড় নেতা দলে যোগ দিচ্ছেন।”
অন্য দিকে, স্বাভাবিক ভাবেই কেজরিওয়ালের মন্তব্যে সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি (BJP)। বাংলায় দলের সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) বলেন, “কেজরিওয়াল বাস্তবিক কথাই বলেছেন। কারণ গোয়া হোক বা ত্রিপুরা, বাংলার বাইরে তৃণমূলকে খায় না মাথায় দেয়, কেউ জানেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আকাশ-কুসুম কল্পনা করছেন। তাই মহিলাদের মাসে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। গোয়ার বাজেট জানতে এমন প্রতিশ্রুতি দিতেন না। এতেই প্রমাণিত হয়, বাংলায় যতই শক্তিশালী হোক না কেন, অন্যত্র তৃণমূলের অস্তিত্ব নেই।”
গোয়া বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বিগত কয়েক মাস ধরেই সেখানে জমি আঁকড়ে পড়ে রয়েছে তৃণমূল। কংগ্রেস (Congress), ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (NCP/এনসিপি) থেকে তাবড় নেতারা জোড়াফুল পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। তার জেরে বিজেপি বিরোধী শিবিরে সমালোচনার মুখেই পড়তে হয়েছে মমতা এবং তৃণমূলকে। বিজেপি-র বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিলেও, বিরোধী শিবিরের নেতা ভাঙিয়ে মমতা আসলে বিজেপি-রই হাত শক্ত করছেন বলে অভিযোগ উঠে আসছেন। তার মধ্যেই এ বার তৃণমূলকে প্রকাশ্যে কটাক্ষ করলেন কেজরিওয়ালও।