কলকাতা : সালটা ছিল ২০২০। সারা পৃথিবীকে গ্রাস করল ভয়ঙ্কর সংক্রামক করোনাভাইরাস।  রোগের আতঙ্ক, মৃত্যু, সংক্রমণের দিন এবার শেষ হবে, ভ্যাকসিনও প্রায় তৈরি, এই আশা নিয়ে শুরু হল ২০২১। কিন্তু না। ভাইরাসের আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি। 





    • ভারতে তৈরি প্রথম দুই করোনা ভ্যাকসিন (Corona Vaccine ) ব্যবহারে অনুমোদন

      ভারত সরকারিভাবে দুটি ভ্যাকসিনকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিন, oxford-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফর্মুলায় তৈরি কোভিশিল্ড, ভারতে যার প্রস্তুতকারক সেরাম ইনস্টিটিউট।  সেই সময় কোভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ । তবে সিংহভাগই ছিলেন তড়িঘড়ি ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করার পক্ষে। প্রথমে ঠিক হয় জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাকরণ করা হবে। 




    • সেরাম ইনস্টিটিউটে আগুন

      ২১ জানুয়ারি ইনস্টিটিউট কারখানায় আগুন লেগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। মার্চ মাসের 26 তারিখে মুম্বইয়ের এক করোনা হাসপাতালে ভয়াবহ আগুন লাগে। ১০ জন রোগীর মৃত্যু হয় । বাকি রোগীদের উদ্ধার করা হয় মৃত্যুর হাত থেকে। এপ্রিল মাসের শেষ লগ্নে মহারাষ্ট্রের এক হাসপাতালে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১৩ জন করোনা রোগী।


    • করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ

      এপ্রিল-মে মাস। ঠিক সেই সময় বাংলা সহ সারা ভারতে ভয়ঙ্করভাবে আছড়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। ঠিক সেই সমটাতেই আমাদের বাংলায় শুরু হয়ে গিয়েছে আট দফায় বিধানসভা নির্বাচন। করোনা পরিস্থিতিতে কেন এতগুলো দফায় নির্বাচন করানো হলো সেই নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন । যদিও নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল এবং আট দফাতেই নির্বাচন হয় পশ্চিমবাংলায়। নির্বাচন পরবর্তীতে রাজ্যজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ঙ্কর আকারে ঢুকে পড়ে।






  • মৃত্যুমিছিল, জ্বলন্ত চিতা, হাহাকার 

    সময়টা ছিল ভয়াবহ। শ্মশানে শ্মশানে জ্বলছিল চিতা । কবরখানায় সারি সারি কবর।  চিতার আগুন নিশ্চিহ্ন না ঘুরে বেড়াচ্ছিল মানুষ দিকে দিকে চলছিল অক্সিজেন নিয়ে হাহাকার। অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যাচ্ছিলেন বহু মানুষ । একাকী মানুষের করোনায় মৃত্যু হওয়া এবং দীর্ঘক্ষন মৃতদেহ বাড়িতে পড়ে থাকার মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ । বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠে আসছিল দিক দিক থেকে। কার্যত ভাইরাসের সামনে বেহাল হয়ে পড়েছিল চিকিৎসা ব্যবস্থা । 




  • ষোটোর্ধ্ব সকলের জন্য টিকা নেওয়ার ছাড়পত্র

    এই পরিস্থিতিতে ষোটোর্ধ্ব সকলের জন্য টিকা নেওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তা ছাড়াও ৪৫ এর বেশি বয়সের কারও কোমর্বিডিটি থাকলেও তাঁদেরও টিকা নেওয়ার অনুমতি মেলে। ১ মার্চ থেকে অনলাইনে আরোগ্য সেতু অ্যাপের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের জন্য নাম মথিভুক্তিকরণ শুরু হয়। ১ এপ্রিল থেকে ৪৫ ঊর্ধ্ব সকলের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। 


  • স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন

    এপ্রিলে DCGI ভারতে জরুরি প্রয়োগের জন্য রাশিয়ার স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।


  • অক্সিজেনের হাহাকার

    এপ্রিল মাসের শেষ দিকে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছিল অক্সিজেনের অভাবে বহু মানুষের মৃত্যুর কথা। ২৭ এপ্রিল করোনায় মোট মৃত্যু সারাদেশে ছোঁয় প্রায় দুই লক্ষ। এটা ছিল সরকারি হিসেবে।
    এপ্রিল-মে মাসে দেশে রাজধানীতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে । দুই মে দেশে বিভিন্ন বিরোধী দলগুলি একত্রিত হয়ে কেন্দ্রকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানায়, দেশের করোনা পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়া এবং হাসপাতালের  অক্সিজেনের জোগান সুনিশ্চিত করার বিষয়ে।




  • নদীবক্ষে পাওয়া গেল সারি সারি লাশ

    এই পরিস্থিতিতে ঘটে আরও এক বীভৎস ঘটনা। বহু পচা গলা মৃতদেহ ভেসে এল গঙ্গায়। বিহারের বক্সার জেলার কাছে নদীবক্ষে পাওয়া গেল সারি সারি লাশ। ধারণা ছিল এই মৃতদেহগুলি করোনা আক্রান্তদের । ভেসে এসেছে উত্তর প্রদেশ থেকে। এই ঘটনা শোরগোল ফেলে দেয় নদীমাতৃক বাংলায়।


  •  প্রাপ্ত বয়স্কদেরই করোনার টিকা দেওয়ার অনুমতি

    এপ্রিলেই সব প্রাপ্ত বয়স্কদেরই করোনার টিকা দেওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেও বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয় ভ্যাকসিনে ঘাটতির ঘটনা। 


  • অন্যান্য ভ্যাকসিন ব্যবহারে অনুমোদন

    ২৯ জুন, DCGI জরুরি ব্যবহারের জন্য Moderna ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। আমাদের দেশে এর প্রস্তুতকারক Cipla । ৭ আগস্ট 2021-এ, ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (DCGI) জনসন এবং জনসন সিঙ্গেল-ডোজ ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। 


  • শিশুদের ভ্যাকসিন

    ২০ অগাস্ট ভারত ১২-১৭ বছরের শিশুদের জন্য Zydus Cadila দ্বারা নির্মিত বিশ্বের প্রথম DNA ভিত্তিক COVID-19 ভ্যাকসিন, ZyCoV-D-কে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। ২১ অক্টোবর , ভারত ১০০ কোটি করোনার টিকা প্রয়োগের ঐতিহাসিক মাইল ফলক ছুঁয়ে ফেলে। 





  • ওমিক্রন-কামড়
    দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম খোঁজ মেলা করোনার ওমিক্রন স্ট্রেন ডিসেম্বরে ঢুকে পড়ে ভারতে। এখন এই ভ্যারিয়েন্টই নতুন করে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। তবে ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ও মানুষের সচেতনতা এই ভাইরাস-আতঙ্ককে জয় করবেই, বছর শেষ এইটুকুই প্রত্যাশা।