নয়াদিল্লি: সন্ত্রাসী কাজকর্মে আর্থিক জোগানের মামলায় যাবজ্জীবনের সাজা পেলেন কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) বিচ্ছিন্নতাকামী নেতা (Separatist Leader) ইয়াসিন মালিক (Yasin Malik)। বুধবার বিকেলে রায় শোনাল দিল্লির বিশেষ NIA আদালত (Special NIA Court)। দু'টি মামলায় ইয়াসিনকে যাবজ্জীবনের সাজা শোনানো হয়েছে। তাঁকে জরিমানাও করা হয়েছে।  জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা NIA যদিও ইয়াসিনের মৃত্যুদণ্ডই চেয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে আনা কোনও অভিযোগেরই বিরোধিতা করেননি ইয়াসিন।


আদালত সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১২০-বি ধারায় ১০ বছরের সাজা হয়েছে ইয়াসিনের। জরিমানা করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ১২১ ধারায় যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে। ১২১-এ ধারায় ১০ বছরের সাজা এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়াও UAPA আইনের ১৮ ধারায় ১০ বছরের সাজা, ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে ইয়াসিনকে। ২০ নম্বর ধারায় ১০ বছরের সাজা এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ধারায় ৫ বছর করে জেল এবং ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।  


যাবজ্জীবন সাজা ইয়াসিনের, জরিমানাও


দিল্লির NIA আদালতে ইয়াসিনের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা NIA।  বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধী আইন (UAPA), সন্ত্রাসে আর্থিক জোগানোর অপরাধে আগেই দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাঁকে। ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অপরাধে, ১২১ ধারায়  ইয়াসিনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়েছিল NIA, অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের আর্জিই জানানো হয়। এই মামলায় সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন। ইয়াসিনের আইনজীবী তাই মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবনের আর্জি জানিয়েছিলেন।


যদিও নিজেকে নির্দোষ বলেই দাবি করছেন ইয়াসিন। আদালতে তিনি বলেন, "এনকাউন্টারে বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর ৩০ মিনিটের মধ্যে আমাকে গ্রেফতার করা হয়। অটল বিহারি বাজপেয়ী আমাকে পাসপোর্ট দিয়েছিলেন। আমি অপরাধী নই। তাই আমাকে নিজের বয়ান রেকর্ড করার সুযোগ দিয়েছিল ভারত।" ইয়াসিন জানান, ১৯৯৪ সালে অস্ত্রত্যাগের পর থেকে মহাত্মা গাঁধীর নীতি মেনে, তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেই এগিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, "তার পর থেকে কাশ্মীরে অহিংস রাজনীতিরই অংশ আমি।"


আরও পড়ুন: Kapil Sibal: কংগ্রেস ছাড়লেন কপিল সিব্বল, যোগ সমাজবাদী পার্টিতে!


ইয়াসিন জানিয়েছেন, দেশের সাত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। গত ২৮ বছর উপত্যকায় সন্ত্রাস অথবা হিংসার সঙ্গে তাঁর কোনও রকম সংযোগ নেই বলেও দাবি করেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবিকে কার্যত চ্যালেঞ্জই জানান। ইয়াসিনের সাফ বক্তব্য, "গত ২৮ বছরে কোনও রকম সন্ত্রাসী কাজকর্ম অথবা হিংসা, নাশকতায় যদি যুক্ত হয়ে থাকি আমি, এবং তা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে মৃত্য়ুদণ্ড মাথা পেতে নেব। কোনও ভাবেই প্রাণভিক্ষা চাইব না। আদালত যা রায় দেবে, মাথা পেতে নেব।"


ইয়াসিনের বিরুদ্ধে রায়ঘোষণাকে ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই থমথমে উপত্যকা। সমস্ত দোকান, বাজার, ব্যবসা বন্ধ একাধিক এলাকায়। রাস্তায় যানবাহন চোখে পড়ছে অল্পবিস্তর। শ্রীনগরের মতো স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। 


একাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন ইয়াসিন


এর আগে কোনও মামলাই ইয়াসিনের বিরুদ্ধে যায়নি বলে মেনে নিয়েছে আদালতও। একই সঙ্গে আদালত জানায়, উপত্যকায় নাশকতামূলক কাজকর্ম চালু রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন ইয়াসিন, যাতে 'স্বাধীনতা সংগ্রাম'-এর নামে সন্ত্রাসী কাজকর্ম চালু রাখতে অর্থ সংস্থান করা যায়। গত ১৯ মে ইয়াসিনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিশেষ বিচারক প্রবীণ সিংহ। কোন সাজা উপযুক্ত, কত টাকা জরিমানা করা যায় ইয়াসিনকে, তা নিয়ে NIA -কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দিয়েছিলেন তিনি।


ইয়াসিনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস আইনের ১৬ নম্বর ধারা (নাশকতামূলক কাজকর্ম), ১৭ নম্বর ধারা (সন্ত্রাসে অর্থের জোগান), ১৮ নম্বর ধারা (সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র), ২০ নম্বর ধারা (সন্ত্রাসী সংগছনের সদস্যতা), UAPA-র ১২০-বি ধারা (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ১২৪-এ (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধারায় মামলা দায়ের করে NIA। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে NIA-এর আনা মামলার বিরোধিতাও করবেন না বলে জানিয়েছিলেন ইয়াসিন।