নয়াদিল্লি: পশ্চিম এশিয়ার আরও এক দেশের অবস্থা ক্রমশ ঘোরাল হয়ে উঠছে। বাশার আল-আসাদ সরকারের অস্তিত্ব ঘিরে সঙ্কট দেখা দিয়েছে সিরিয়ায়। সশস্ত্র বিদ্রোহী এবং কট্টরপন্থীরা সেখানে একের পর এক এলাকার দখল নিতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের অবিলম্বে সিরিয়া ছাড়তে বলল দিল্লি। সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে, তা বাতিল করতেও বলা হল।
শুক্রবার রাতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সিরিয়া নিয়ে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। সিরিয়ায় থাকা ভারতীয়দের অবিলম্বে সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সিরিয়া যাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে যোগাযোগের জন্য ইমেল আইডি এবং ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রকের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'যাঁদের পক্ষে সম্ভব, যত দ্রুত সম্ভব দিল্লি ছাড়তে বলা হচ্ছে তাঁদের। যাঁরা তা পারবেন না, তাঁরা অত্যন্ত সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা বন্ধ রাখুন আপাতত। সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে যাঁদের, বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত, তা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল'।
সিরিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়দের সেখানে দিল্লির দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বলে হয়েছে নির্দেশিকায়। হেল্পলাইন নম্বর +৯৬৩ ৯৯৩৩৮৫৯৭৩ চালু করা হয়েছে। এই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজও করা যাবে। পাশাপাশি, hoc.damascus@mea.gov.in ইমেল আইডি-ও দিয়েছে দিল্লি।
এই মুহূর্তে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে সিরিয়ায়। গত সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম থেকে ইসলামি সন্ত্রাসবাদীরা আচমকা হামলায় চালায় আসাদ-বাহিনীর উপর। সেই থেকে একের পর এক এলাকা দখল করে চলেছে তারা। আলেপ্পো তাদের দখলে চলে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। সেখান থেকে সেনা তুলে নিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছে আসাদ সরকার। এই মুহূর্তে মধ্য সিরিয়ার হামা-র দখল পেতে লড়াই চলছে। আক্রমণ প্রতিহত করতে আসাদ-বাহিনীকে সাহায্য করছে রাশিয়া।
২০১১ সালে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই বিদ্রোহ পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের আকার ধারণ করে, যাতে তাবড় শক্তিধর রাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ে। এখনও পর্যন্ত সিরিয়ায় ৫ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ১.২ লক্ষের মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন, যার মধ্যে ৫০ লক্ষ বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন।
গত পাঁচ দশক ধরে সিরিয়া শাসন করছেন আসাদ। কিন্তু এমন সঙ্কটের মুখে তাঁকে আগে পড়তে হয়নি বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। বাসাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে রাশিয়া এবং ইরান। কিন্তু দেশের উত্তর এবং পূর্বের কিছু অঞ্চল কুর্দিদের সশস্ত্র সংগঠনের হাতে, যাদের আমেরিকা সহযোগিতা জোগাচ্ছে বলে দাবি কূটনীতিকদের।
সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল আবার ইসলামি সন্ত্রাসবাদী সংস্থা হায়ত তাহরির আল-শামের হাতে রয়েছে। সেখানেও উপস্থিতি রয়েছে তুরস্কের মদতপুষ্ট বিদ্রোহী সংগঠন Syrian National Army. তুরস্কের সেনা তাদের সহযোগিতা জোগায়। ২০১২ সালে আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল হায়ত। সেই সময় আল-কায়দার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তারা। ২০১৬ সালে আল-কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে হায়ত নামে আত্মপ্রকাশ। এই মুহূর্তে ইদলিম এবং আলেপ্পো তাদের দখলে রয়েছে। আসাদ সরকারকে উৎখাত করাই তাদের লক্ষ্য।