বেজিং: করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় এক বছর পার। কী পরিস্থিতি করোনার উৎসস্থল উহানে? যে সি ফুড মার্কেট থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ, সেই মার্কেট এখনও পরিদর্শন করেননি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আধিকারিকরা। এমনকী, তাঁরা এখনও পর্যন্ত উহানেই যাননি। চিনের দাবি, ওই মার্কেট থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়েনি। ফলে বিশেষজ্ঞদের উহানে যাওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু এক বছরেও সেটা না হওয়ায় আদৌ কোনওদিন করোনার উৎপত্তির বিষয়ে কিছু জানা যাবে কি না, সে বিষয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে।


গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর উহানে রহস্যজনক নিউমোনিয়ায় চারজনের মৃত্যু হয়। প্রত্যেকেই সি ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। এরপরেই রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই মার্কেট। টানা ৭৬ দিন উহানে কঠোর লকডাউন জারি থাকে। এখনও চিনের এই শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। সি ফুড, রেড মিট ও সবজির মার্কেট আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দোকানগুলিও খুলেছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষের মধ্যে এখনও আতঙ্ক রয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই মার্কেট ফাঁকা থাকছে। যাঁরা সেখানে যাচ্ছেন, তাঁদের শরীরের তাপমাত্রা দেখছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তবে সাংবাদিকদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে, মার্কেটের ভিতরে কোনও ছবি তোলা যাবে না। ওই মার্কেটের দ্বিতীয় তলে একটি চশমার দোকানের এক কর্মী বলছেন, ‘অনেকেরই হয়তো এই মার্কেট সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখন এই বিল্ডিং ফাঁকা। এই ফাঁকা বিল্ডিং নিয়ে উদ্বেগের কী আছে?’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার উৎপত্তির বিষয়ে তদন্তের ক্ষেত্রে এই মার্কেটের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। সেই কারণে মার্কেটটি হয়তো ভেঙে ফেলা হবে না। যদিও করোনা ছড়িয়ে পড়ার পরেই যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই গবেষণা চালানো হচ্ছে। নতুন করে মার্কেট থেকে নমুনা সংগ্রহ করার সম্ভাবনা কম।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজির অধ্যাপক জিন ডং-ইয়ান জানিয়েছেন, ‘উহানেই প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা যায়। ফলে করোনার উৎস খুঁজে বের করা জরুরি। অনেকের অনুমান, প্রাণীদের শরীর থেকেই ভাইরাস ছড়িয়েছে। অনেকে আবার বলছেন, মানুষের শরীর থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ফলে ঠিক কী হয়েছে, সেটা জানা জরুরি।’

চিনের সরকারি আধিকারিকদের মতোই উহানের বাসিন্দাদের দাবি, সেখান থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়েনি। তাঁদের দাবি, বাইরে থেকে এই শহরে ভাইরাস প্রবেশ করেছিল। তারপর হয়তো সংক্রমণ ছড়িয়েছে। গত বছরের মে থেকে উহানে স্থানীয়ভাবে আর কোনও সংক্রমণ ছড়ায়নি। তবে পরিস্থিতি যে এখনও স্বাভাবিক হয়নি, সেটা স্পষ্ট।