রাষ্ট্রপুঞ্জ:করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়ার সাফল্যের প্রশংসা রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের। তিনি বিশ্বের বাকি দেশগুলি দক্ষিণ কোরিয়ার এই উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় চূড়ান্ত সফল দক্ষিণ কোরিয়া এবং কোভিড-১৯-এর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার পরিকল্পনাও করছে।


গত বৃহস্পতিবারের ঘোষণার উল্লেখ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুটারেস বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন কোন সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই অতিমারির অভিঘাত সামলে ওঠার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া উল্লেখযোগ্য পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তাবও পেশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কয়লা চালিত প্রকল্প নিষিদ্ধকরণ ও বর্তমান কয়লা চালিত প্রকল্পগুলি থেকে নির্গমন হ্রাস সংক্রান্ত পরিকল্পনা।

গুটারেস এক সাংবাদিক বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার দৃষ্টান্ত অন্যান্য দেশগুলি অনুসরণ করবে বলে আশা করছি।

দক্ষিণ কোরিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বৃহস্পতিবার জানায় যে, গত ২৪ ঘন্টায় চারজন আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের সবাই বিদেশ ফেরত।  সে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১০,৭৬৫। মৃত ২৪৭ এবং সুস্থ ৯,০৫৯।

ফেব্রুয়ারির শেষের দিক থেকে মার্চের প্রথম দিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিদিন প্রায় ১০০ টি করে নতুন সংক্রমণের ঘটছিল। বিগত কয়েক সপ্তাহ আক্রান্তের হার কমেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ বেশ কিছু নির্দেশিকা শিথিল করেছে সে দেশের সরকার। আক্রান্তের হার কম থাকলে আগামী দিনগুলিতে বিধিনিষেধ আরও শিথিল করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত ২০ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম কারুর করোনা টেস্ট পজিটিভ হয়েছিল। আমেরিকাতেও ওই দিনই প্রথম সংক্রমণের হদিস মেলে। দক্ষিণ কোরিয়ার আধিকারিকরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সুপারিশ মেনে টেস্টের ওপর গুরুত্ব দেন এবং এ ধরনের টেস্ট কিটের উত্পাদনের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলিকে অনুমতি দেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা আমেরিকার এক-ষষ্ঠাংশ। তাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে প্রত্যেকদিন তারা ২০ হাজারের বেশি টেস্ট করতে সক্ষম হয়। তারা ড্রাইভ-থ্রু টেস্টিং সেন্টারেরও উদ্যোগ নেয়। এতে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু কোনও লক্ষ্মণ নেই, তাঁদের  দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। এভাবে নতুন সংক্রমণের হার কমিয়ে নিয়ন্ত্রণযোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়।

অন্যদিকে, মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন নিজস্ব পরীক্ষা পদ্ধতি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পরীক্ষা পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ। সিডিসি-র তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে মাত্র ৪৭২ জন রোগীর টেস্ট করা হয় এবং এরমধ্যে ২২ টি পজিটিভ হয়।

ফলাফলে দেখা গিয়েছে যে, সংক্রমণের হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয় দক্ষিণ কোরিয়া, অন্যদিকে, আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকে।

গুটারেস বলেছেন, জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপের সঙ্গেই হাতে হাত মিলিয়ে অতিমারির বিপদ সামলে ওঠার প্রয়োজন, যেমনটা দক্ষিণ কোরিয়া করছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বলেছেন, অর্থনীতির পুণরুজ্জীবনে বরাদ্দের ক্ষেত্রে যাতে 'পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থান' ও 'কার্বন-হীন শক্তি'র উত্সের ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলিকে।

তিনি বলেছেন, করদাতাদের অর্থ  'জীবাশ্ম জ্বালানি'র জন্য ভর্তুকি বা 'কার্বণ নির্গমন বহুল শিল্পগুলিকে পরিত্রাণ' দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা উচিত হবে না।