নয়াদিল্লি: স্বাধীনতা দিবসে মাংস খাওয়া যাবে না বলে নির্দেশিকা জারি হয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পৌরসভা এলাকায়। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই মাংস বিক্রির ‘ড্রাই ডে’ সংক্রান্ত নতুন ক্যালেন্ডার প্রকাশের দাবি উঠল। কেন্দ্রীয় সরকারকে এই মর্মে চিঠি দিল পোলট্রি ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (PFI). ধর্মীয় উৎসব, জাতীয় ছুটি বা বিশেষ দিন মিলিয়ে বছরের যে যে দিন মদ বিক্রি করা যায় না, তাকে ‘ড্রাই ডে’ বলা হয়।  একই রকম ভাবে মাংস বিক্রির ক্ষেত্রেও সেই মর্মে ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে আবেদন জানানো হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। (Independence Day Meat Sale Ban Row)

কেন্দ্রীয় মৎস্য, পশুপালন ও ডেয়ারি মন্ত্রী এসপি সিংহ বাঘেলকে চিঠি দিয়েছে PFI. বলা হয়েছে, আগে থেকে ক্যালেন্ডারে উল্লেখ থাকলে, ধর্মীয় উৎসবে মাংস বিক্রি নিয়ে এই বিবাদ আর থাকবে না। এর ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হবে না ব্যবসায়ীদের। ১৫ অগাস্ট, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মাংস  নিষিদ্ধ করা হয়েছে মহারাষ্ট্র এবং তেলঙ্গানার কিছু পৌরসভা এলাকায়। মাংসের দোকান, কসাইখানা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে যেমন, তেমনই বলা হয়েছে, ওই দিন পশুহত্যা ববা মাংস বিক্রি হলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। জনাষ্টমীতেও মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে হায়দরাবাদে। (Meat Sale Ban Calendar)

মানুষের খাদ্যাভ্যাসের উপর এমন অযাচিত হস্তক্ষেপ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বিজেপি বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা। এমনকি মহারাষ্ট্রে বিজেপি-র জোট সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ারও এর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সেই নিয়ে তরজার মধ্যেই PFI-এর তরফে চিঠি লেখা হল কেন্দ্রকে। এমনিতে রামনবমী, মহা শিবরাত্রি, গাঁধী জয়ন্তী, বাল্মীকি জয়ন্তী উপলক্ষে একাধিক শহরে মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এই ধরনের ঘোষণা হলে আর্থিক ক্ষতি হয় বলে দাবি PFI-এর।  তাদের দাবি, এতে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনই দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন তাঁদের রুটি-রোজগারের উপরও প্রভাব পড়ে। তাই আগে থেকে জানা থাকলে ভাল। 

PFI-এর প্রেসিডেন্ট রণপাল ধান্দা আরও একধাপ এগিয়ে জানিয়েছেন, বিশেষ কোনও দিনে মাংসের দোকান যদি বন্ধ রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে তিন মাস আগে যেন নির্দেশ দেওয়া হয়। যে যে এলাকায় দোকান বন্ধ রাখতে হবে, সেখানকার মানুষও যেন জানতে পারেন। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে যে কমিটি, তাতে PFI-এর সদস্যকে শামিল করতেও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। শ্রাবণ মাসে মাংস বিক্রি সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা যাতে শুধুমাত্র মন্দিরের আশেপাশেই সীমিত থাকে, অনুরোধ জানানো হয়েছে সেই মর্মেও।

এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মহারাষ্ট্রেরই কমপক্ষে পাঁচটি পৌরসভার তরফে মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) নেতা আদিত্য ঠাকরে। তাঁর কথায়, পুজোর প্রসাদে চিংড়ি পর্যন্ত রাখার নিয়ম আছে তাঁদের সংস্কৃতিতে। মানুষের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কে দিয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। যদিও বিজেপি-র যুক্তি এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে পৌরসভাগুলির। মহারাষ্ট্রের নাগপুর, নাসিক, ছত্রপতি সম্ভাজিনগর, কল্যাণ-দোম্বিভ্যালি পৌরসভা স্বাধীনতা দিবসে মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেে। ২০ অগাস্টও মাংসের দোকান, কসাইখানা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। জন্মাষ্টমীতে এই নির্দেশ বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে গ্রেটার হায়দরাবাদ পৌরসভা।