নয়াদিল্লি : ইজরায়েল ও ইরানের হামলা-পাল্টা হামলা চতুর্থ দিনে পড়ল। সময় যত গড়াচ্ছে, ততই দুই দেশের মধ্যে মিসাইল হানা বাড়ছে। গতকাল রাত থেকে তেহরানের আকাশে বারবার হানা দিয়েছে ইজরায়েলের ফাইটার জেট। ইরানের দাবি, তৈল শোধনাগারের পাশাপাশি, পারমাণবিক কেন্দ্র এমনকী, ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় মিসাইল অ্যাটাক চালাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। এর পাল্টা জবাব হিসাবে ইজরায়েলের হাইফা সংশোধনাগারে ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুঁড়েছে ইরান। 

ইরানের ফর্ডো পারমাণবিক স্থাপনায় বেশ কয়েকটি জোরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। যার জেরে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। পারমাণবিক স্থাপনার কাছে হওয়া ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ২.৫। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, ১৩ জুন দুই দেশের মধ্যে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ইজরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। এই আবহে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, এখন তেহরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করছে ইজরায়েলের বায়ুসেনা। 

ওমানে রবিবার ষষ্ঠ দফার পরমাণু বৈঠকে বসার কথা ছিল আমেরিকা ও ইরানের। কিন্তু ইজরায়েলের সঙ্গে তৈরি হওয়া সংঘাতের আবহে সেই বৈঠক আগেই ভেস্তে গেছে! এই অবস্থায় রবিবার ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সমাজমাধ্যম ট্রুথ-এ তিনি লিখেছেন, (শনিবার) রাতে ইরানের ওপর আক্রমণের সঙ্গে আমেরিকার কোনও সম্পর্ক নেই। যদি আমাদের ওপর ইরান কোনওভাবে বা কোনও ধরনের আক্রমণ করে, তাহলে আমেরিকার সশস্ত্র বাহিনী পূর্ণ শক্তি দিয়ে তোমাদের (ইরান) ওপর এমনভাবে আঘাত হানবে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। 

কিন্তু ট্রাম্পের এই বার্তাকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক!ট্রাম্প যখন বলছেন, ইরানের ওপর ইজরায়েলের এয়ার স্ট্রাইকে আমেরিকার কোনও ভূমিকা নেই, তখন সম্পূর্ণ উল্টো সুর শোনা গেছে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর গলায়। 'ইজরায়েল যা করছে, তাতে সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমেরিকার মানুষ এবং বিশ্বের আরও অনেকের', বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি মানতে নারাজ তেহরানও। শনিবার ষষ্ঠ দফার পরমাণু বৈঠক বাতিল করে এর জন্য আমেরিকাকেই কার্যত দায়ী করেছিল ইরান। এদিন ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, গত ২ দিন ধরে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে আমেরিকা থেকে বার্তা পেয়েছি যে, তারা এই হামলায় যুক্ত নয় এবং ভবিষ্যতেও যুক্ত হবে না।  

এরপরেই ইরানের বিদেশমন্ত্রী বলেন, 'আমেরিকার এই দাবিতে আমরা বিশ্বাস করি না। আমাদের কাছে এমন প্রমাণ আছে যা অন্য কিছু প্রমাণ করে।' ইরানের দাবি, আমেরিকাকে স্পষ্টভাবে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে এবং পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে হামলার নিন্দা করতে হবে। 

মধ্যপ্রাচ্যে এই যুদ্ধের আবহে কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে ভারতের! বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান এবং ইজরায়েলের এই সংঘাত ক্রমশ যুদ্ধের রূপ নিলে এবং তা দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে, অর্থনীতি থেকে কূটনীতি, সবেতেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে ভারতকে। এমনিতেই দুই দেশের সংঘাতের আবহে জুন মাসের শুরু থেকেই বাড়তে শুরু করেছে অপরিশোধিত তেলের দাম।