নয়াদিল্লি: এতদিন শুধুমাত্র অনুমানের মধ্যেই আটকে ছিল। এবার রাখঢাক সরিয়ে বেরিয়ে এল ইরান। গোটা পৃথিবীর সামনে নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডারের একঝলক তুলে ধরল। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ইরান, যাতে মাটির নীচে পাতালপুরীতে আস্ত Missile City বা 'ক্ষেপণাস্ত্র শহর' গড়ে তুলেছে তারা। আর সেই ভিডিও সামনে আসতেই কার্যত নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মহলের। পশ্চিম এশিয়ায় এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে আচমকা ইরান নিজের অস্ত্রভাণ্ডারের রূপ গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরল কেন, ঠিক কাকে বার্তা দিতে চাইছে তেহরান, সেই নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে। (Iran Missile City)


ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে ৮৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি প্রকাশ করেছে। পাতালপুরীতে থরে থরে সাজানো অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র চোখে পড়েছে তাতে। ইরানের Revolutionary Guards (IGRC)-র মিলিটারি কম্যান্ডার মেজর জেনারেল মহম্মদ হোসেন বাঘেরি এবং IRGC-র এ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান আমির আলি হাজিজাদেনকে দেখা গিয়েছে ভিডিওতে। পাতালপুরীতে হুড খোলা জিপে চড়ে অস্ত্রভাণ্ডারের তদারকি করছেন তাঁরা। (Iran Unveils Missile City)


Missile City-র ভিডিও প্রকাশ করে হোসেন বাঘেরি বলেন, "আগের তুলনায় ইরানের বজ্রমুষ্টি এখন আরও শক্তিশালী। আত্মরক্ষায় এখন ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী ইরান।" এ প্রসঙ্গে Operation True Promise 2-র উল্লেখ টানেন তিনি। ২০২৪ সালের ১৩ এপ্রিল ইজরায়েলকে লক্ষ্য় করে যে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করেছিল ইরান, তারই নাম ছিল Operation True Promise 2. 



এই যদিও প্রথম নয়। এই নিয়ে পাতালপুরীতে তৃতীয় Missile City-র নির্মাণ করল ইরান। সদ্য প্রকাশিত ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, দুর্গের আদলে মাটির নীচে আস্ত একটি শহর গড়ে তোলা হয়েছে। জাতীয় সড়কের মতো এঁকেবেঁকে এগিয়েছে সুড়ঙ্গপথ। সেই সুড়ঙ্গপথের দুই পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে থরে থরে ক্ষেপণাস্ত্র। একটি বা দু'টি নয়, শয়ে শয়ে ক্ষেপণাস্ত্র, যার কোনওটির আকার পেল্লাই, কোনওটি আবার আকারে ছোট। 


একঝলকে যেটুকু চোখে পড়েছে, তাতে ইরানের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র Kheybar Shekan, Ghadr-H, Emad, Qadr H, Haj Qassem, Sejil, Paveh Land Attack Cruise Missile সাজানো রয়েছে থরে থরে। কয়েক মাস আগে ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে এই Paveh Land Attack Cruise Missile-ই ছুড়েছিল ইরান। তবে পাতালপুরীর ওই ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারটি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। তাঁদের মতে, ঠেসে অস্ত্র ভরে রাখলেও, নিরাপত্তার তেমন ব্যবস্থা নেই। ফলে একটু এদিক ওদিক হলে ইরানের মাটিতেই মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।


এর আগে, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসেও পাতালপুরীতে ইরানের গোপন একটি অস্ত্রভাণ্ডারের ছবি সামনে আসে। স্বয়ংক্রিয রেলপথের মাধ্যমে সুড়ঙ্গপথে সেখানে অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছনো হচ্ছিল। এর পর, ২০২৩ সালে পাতালপুরী থেকে একটি কমপ্লেক্সের ফুটেজ সামনে আসে, যেখানে যুদ্ধবিমান মজুত রয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু এবার যে Missile City-র ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, তা সবদিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের পাশাপাশি, ইয়েমেনেও যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই সেখানে মুহুর্মুহু হামলা চালিয়েছে আমেরিকা।


সেই সঙ্গে পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ইরানের। ইরানকে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার সমর্পণ করতে দু'মাস সময় দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরমাণু অস্ত্র, সরঞ্জাম, ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে অস্ত্র তৈরির কারখানা, সব ভেঙে দিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অন্যথায় ইরানকে কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়া তো বটেই, আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিও টালমাটাল। সেই আবহে Missile City-র ভিডিও প্রকাশ করে ইরান আসলে ট্রাম্পকে বার্তা দিল বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।


ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের দাবিদাওয়া খারিজ করে দিয়েছে ইরান। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পরমাণু অস্ত্র সমর্পণের প্রশ্ন ওঠে না বলে জানিয়ে দিয়েছে তারা। পাশাপাশি, ইরানের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতল্লা আলি খামেনেই আমেরিকাকে 'গুন্ডা' বলেও উল্লেখ করেন। কিন্তু আমেরিকাও পিছু হটছে না। পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধবিমান নামাতে শুরু করেছে তারা। অন্য দিকে, ইরান জানিয়েছে, পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত তারাও। সবমিলিয়ে পারদ চড়ছেই। সেই আবহেই এই ভিডিও ঘিরে তোলপাড় আন্তর্জাতিক মহল।