তেহরান: এবার অনশন (hunger strike) শুরু করলেন ইরানের (iran) বিশ্ববন্দিত চিত্রপরিচালক জাফর পানাহি (jafar panahi)। কারণ? সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়া সত্ত্বেও তেহরানের (tehran) ইভন প্রিজন থেকে মুক্তি পাননি পানাহি। তাই ইরানের বিচারব্যবস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর ' বেআইনি ও অমানবিক' আচরণের প্রতিবাদে অনশনের পথ বাঁচলেন 'অফসাইড' ছবির নির্মাতা। 


কেন প্রতিবাদ?
জেল থেকে যে বিবৃতি তিনি দিয়েছেন, তার মমার্থ একটাই। ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী এই "পণবন্দি" করার যে খেলায় মেতেছে তার প্রতিবাদে অন্ন, জল তো বটেই, জীবনদায়ী ওষুধও নেবেন না পানাহি। তাতে যদি কারাগার থেকে তাঁর নিথর দেহ বেরোয়, তবে তাই হোক। বরেণ্য পরিচালকের কড়া সিদ্ধান্ত জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়েছেন স্ত্রী তাহেরে সইদি ও ছেলে পানাহ পানাহি। তার পর থেকে তোলপাড়। 

কবে অন্তরীণ?
গত জুলাইয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল জাফর পানাহিকে। দেশজুড়ে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে সতীর্থ চলচ্চিত্র পরিচালক মহম্মদ রসৌলভকে এর কয়েক দিন আগেই গ্রেফতার করেছে ইরান প্রশাসন। সেই মামলায় তেহরানের প্রসিকিউটরের দফতরে গিয়েছিলেন পানাহি। তখন তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু অক্টোবরেই বরেণ্য পরিচালকের মুক্তির পক্ষে রায় দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তার পরও জেলবন্দি কেন তিনি? স্ত্রীর অভিযোগ, ইরানের গুপ্তচর সংস্থা বিচারবিভাগকে নিরন্তর চাপ দিয়ে চলেছে যাতে পরিচালককে মুক্তি না দেওয়া হয়। সেই কারণেই রায় তাঁর পক্ষে থাকা সত্ত্বেও জেলের অন্ধকার কুঠুরিতেই দিন কাটছে 'ট্যাক্সি' , 'দ্য সার্কল'-র মতো ছবির পরিচালক। এবার তারই প্রতিবাদে অনশনে নামলেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাঁর 'অফসাইড' ছবির গল্পের সঙ্গেও ইরানের দমনমূলক প্রশাসনের বিপুল মিল রয়েছে। ছবিটির মূল চরিত্র, এক ফুটবলপাগল তরুণী, নিয়ম ভেঙে ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে পৌঁছে যান। পরে গ্রেফতারও হন। গোটা ছবিটায় ইরানে জারি অপরিসীম নিষেধাজ্ঞার শৃঙ্খলের ছবিটি স্পষ্ট। প্রসঙ্গত, জানুয়ারির গোড়ায় আর এক বিখ্যাত পরিচালক আসগর ফারহাদির 'দ্য সেলসম্যান' ছবির তারকা অভিনেতা তারানেহ আলিদুস্তিকে মুক্তি দিয়েছিল ইরান সরকার। সরকার-বিরোধী প্রতিবাদে সামিল হওয়ার অভিযোগে তাঁকে অন্তত তিন সপ্তাহ বন্দি রাখা হয়।


কেন প্রতিবাদ...
গত সেপ্টেম্বরের পর থেকেই ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ইরান। মাহসা আমিনি নামে এক তরুণীর রহস্য়মৃত্য়ুর পর থেকে তেতে ওঠে পরিস্থিতি। তাঁর পরিবার জানিয়েছিল, নিয়ম মেনে হিজাবে মাথা ঢেকেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ২২ বছরের তরুণী। কিন্তু সেটি আলগা করে জড়িয়ে রাখা হয়েছে বলে মনে হয়েছিল Morality Police-র। তাই গাড়ি থেকে বের করে রাস্তার উপরই গ্রেফতার করা হয় মাহসাকে। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। বরং তিনদিনের মাথায় হাসপাতালে মৃত্যু হয়। পরিবাররে অভিযোগ ছিল, পুলিশি হেফাজতে নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে তরুণীকে যা মানেনি প্রশাসন। তার পর থেকেই বিক্ষোভের আগুন দিকে দিকে।