নয়া দিল্লি: সালটা ২০১৪। ইতিহাসবিদ ক্যাথরিন করলিস পুরনো মানচিত্র, সরকারি নথি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু সমীক্ষা করছিলেন। সেই কাজ করতে করতে হঠাৎই নজরে আসে গোপন সমাধি। যদিও সেখানে নেই কোনও সমাধিফলক, শিলালিপি কিংবা নেই কোনও রেকর্ড! ইতিহাসবিদের মনে প্রশ্ন ওঠে এ তাহলে কীসের সমাধি? আয়ারল্যান্ডের গলওয়ের তুয়াম শহরে প্রাক্তন সেন্ট মেরিজ শিশু আশ্রমের (মাদার্স অ্যান্ড বেবি হোম) স্থানে গণকবরের প্রমাণ মিলেছে। গণকবরের সন্ধান পান শৌখিন ইতিহাসবিদ ক্যাথরিন করলিস।  সোমবার থেকে এই জায়গায় আনুষ্ঠানিক খননকাজ শুরু হচ্ছে। প্রায় দুই বছর ধরে খনন চলবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে শিশুদের একটি খেলার মাঠের পাশের ঘাসের বর্গাকার জায়গায় নামানো হয়েছে খননযন্ত্র।   

পরবর্তীতে এই সমাধিই আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ এক অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে গেল বিশ্বের কাছে। ২০১৪ সালে জানা যায়, দেশটির তুয়াম শহরের একটি পুরনো শিশু হোমের নিচে শত শত শিশুকে গণকবর দেওয়া হয়। একটি তালিকায় ৭৯৬ জনের মৃত্যুর বিষয় নথিভুক্ত থাকলেও তাদের কবরের সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল না।

ইতিহাসবিদ একটি লেখাতে জানিয়েছিলেন, ওই স্থানে আগে একটি সুয়ারেজ ছিল, যা ১৯৩৭ সালের পর বন্ধ হয়ে যায়। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে দুই শিশু এখানে খেলার সময় একটি কংক্রিট স্ল্যাব সরিয়ে হাড় দেখতে পায়। ক্যাথরিনের সংগ্রহ করা মৃত্যু তালিকায় ৭৯৬ শিশুর নাম থাকলেও তাদের কারো কবরের খোঁজ মেলেনি।                                

সানডে টাইমস জানিয়েছে, ২০১২ সালে স্থানীয় ইতিহাসচর্চার অংশ হিসেবে করলেস দাবি করেছিলেন, তুয়ামে ১৯২৫ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পরিচালিত সেই ক্যাথলিক হোমে মারা যাওয়া ৭৯৬ শিশুর কোনও কবরের রেকর্ড নেই। তিনি মনে করছেন, ১৯৭৫ সালে ওই হোমের পুরোনো যে সেপটিক ট্যাঙ্কে দুই শিশুর দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল, হয়তো সেখানে বাকিদের দেহাবশেষও রয়েছে।

প্রকাশিত রিপোর্টে খবর যে, সরকার স্বীকার করেছে এমন ৯ হাজার শিশুর মৃত্যু ঘটেছে আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন মাদার অ্যান্ড বেবি হোমে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবিবাহিত মা ও তাঁদের সন্তানদের রাখা হতো। কিন্তু ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়নও চালানো হত। 

২০১৭ সালে বহু বছর আগে আবিষ্কৃত দুই শিশুর হাড়ের বিশ্লেষণে দেখা যায়—সেগুলো ১৯২৫ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যকারই। কিন্তু আইনি অনুমোদন ও বাজেট সংকটের কারণে খননকাজ বারবার পিছিয়ে যায়। এখনও অনেক পরিবার অপেক্ষায় আছেন তাদের ভাইবোন, সন্তান কিংবা আত্মীয়দের কোনো খোঁজ পাওয়ার আশায়।