ইনস্টাগ্রামে বাবার দুটি ছবি পোস্ট করেছেন বাবিল। একটিতে শিশু তিনি, ইরফানের সঙ্গে, অন্যটিতে ইরফান বিছানায় শুয়ে, সঙ্গে কুকুর। বাবিল লিখেছেন, আমার বাবা সারা জীবন হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অভিনয় শিল্পকে আরও উত্তুঙ্গ করার পথ খুঁজেছেন। একজন সিনেমার ছাত্র হিসেবে বাবা আমাকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কী শিক্ষা দিয়েছেন জানেন? অভিনয় শেখার স্কুলে যাওয়ার আগে তিনি আমাকে বলেন, বলিউড বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতে খুব একটা সম্মান পায় না, তাই তাঁকে নিজেকে আলাদা করে প্রমাণ করতে হবে, বলিউডের বাইরে যে ভারতীয় চলচ্চিত্র, সে সম্পর্কে জানতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, তাঁর কথাই সত্যি। বলিউডের বাইরে কোনও সম্মান নেই, ৬০-৯০ পর্যন্ত ভারতীয় সিনেমার যে বিরাট জগৎ সে সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। বিশ্ব সিনেমায় ভারতীয় সিনেমাকে শুধু একটা কথাতেই বোঝানো হয়, বলিউড অ্যান্ড বিয়ন্ড। তাও বিদ্রূপের হাসির সঙ্গে। সত্যজিৎ রায় এবং কে আসিফের সিনেমা সম্পর্কে কটা লোক জানেন?
কেন বলিউড সম্মান পায় না আন্তর্জাতিক সিনেমায়? বাবিলের বক্তব্য, কারণ আমরা, ভারতীয় দর্শকরা, নিজেদের বদলাতে নারাজ। আমার বাবা বলিউডের এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অভিনয় নামক শিল্পটির উত্তরণে নিজের জীবন দান করেছেন কিন্তু নাটুকে ওয়ান লাইনার বলা, ফিজিক্স ও বাস্তবের ধার না ধারা, ফটোশপড করা আইটেম সং গাওয়া সিক্স প্যাক হাঙ্কদের কাছে বক্স অফিসে পরাজিত হয়েছেন তিনি। অন্ধ লিঙ্গ বৈষম্য, পুরুষতন্ত্রের সেই বস্তাপচা ধারণার কাছে বারবার হেরে গিয়েছেন বাবা, আর আপনারা তো বোঝেন, বলিউডের বেশিরভাগ বিনিয়োগ তার দুষ্টচক্রের পথে জয়ীদের কাছে যায়। এর কারণ একটাই, আমরা দর্শকরা তাই চেয়েছি, তাই উপভোগ করেছি। আমরা শুধু বিনোদন চেয়েছি, চিন্তাভাবনার নিরাপদ ঘেরাটোপে থাকতে চেয়েছি, ভয় পেয়েছি, বাস্তব নিয়ে আমাদের যে হালকা ছাঁদের কল্পনা তা যেন ভেঙে না যায়, ধারণায় যেন কোনও পরিবর্তন না আসে। সিনেমার যাবতীয় সম্ভাবনা, মানবতা ও অস্তিত্বের ওপর তার প্রভাব- এ সব জিনিসপত্র দূরে থাকাই ভাল। তাই কালকি কোয়েচলিন চুল কেটে ফেলায় যখন ছেলেদের মত দেখাচ্ছে বলে ট্রোলড হন, তখন অদ্ভুত অনুভূতি হয়।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে বাবিল বলেছেন, এবার একটা পরিবর্তন এসেছে, নতুন বাতাসের ঘ্রাণ আসছে। তরুণ প্রজন্ম নতুন অর্থ খুঁজছে। আমরা নিজেদের জমি ছাড়ব না, গভীরতর অর্থ সন্ধানের এই যে আকুতি, তা যেন চেপে না দেওয়া হয়।
দেখুন তাঁর পোস্ট
১ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিউরোএনডোক্রাইন টিউমারের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে এপ্রিলে চলে গিয়েছেন ইরফান। রয়ে গিয়েছেন অনুরাগীদের মনে।