নয়াদিল্লি: ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধ ঘিরে সঙ্কটে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। গাজায় লাগাতার বোমাবর্ষণ চালানোর পাশাপাশি, সেখানে ইজরায়েলি সেনা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপুঞ্জের (United Nations) মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতারেস। তাতে এবার রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব পদ থেকে অবিলম্বে গুতারেসের (Antonio Guterres) পদত্যাগের দাবি তুলল ইজরায়েল। গুতারেস ওই পদের অযোগ্য বলে দাবি তাদের। (Israel Palestine War)


রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজরায়েলের দূত, গিলাদ এর্দান মঙ্গলবার এই দাবি তোলেন। তাঁর বক্তব্য, "শিশু, মহিলা এবং বয়স্কদের গণহত্যা সম্পর্কে যে ধারণা ওঁর, তাতে রাষ্ট্রপুঞ্জকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সঠিক ব্যক্তি নন উনি।" ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রী এলি কোহেনও গুতারেসের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর প্রশ্ন, "রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব মহাশয়, কোন দুনিয়ায় বাস করেন আপনি?"


বুধবার ইজরায়েল বনাম প্যালেস্তাইন যুদ্ধ ১৯তম দিনে পা রেখেছে। ইজরায়েলি আক্রমণে সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ জন প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।  এর মধ্যে মঙ্গলবারই শুধুমাত্র ৭০৪ জন মারা গিয়েছেন। আহতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৯৭। সেই আবহে রাষ্ট্রপুঞ্জে জরুরি বৈঠক চলছিল মঙ্গলবার। সেখানে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন গুতারেস।


রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলছিল।সেখানে প্যালেস্তাইনের প্রতিনিধি হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। নিহতরা অধিকাংশই নিরীহ নাগরিক বলে জানান তিনি। সেখানে হামাসের সমালোচনা করলেও, তাদের উপর রাগ মেটাতে নিরীহ প্যালেস্তিনীয়দের কচুকাটা করার তীব্র প্রতিবাদ জানান। 


আরও পড়ুন: আর আঘাত-প্রত্যাঘাত নয়, গাজা আক্রমণের হুঁশিয়ারি ইজরায়েলের, সাবধানী আমেরিকা


মঙ্গলবার গুতারেস বলেন, "গাজায় প্রকাশ্যে যে ভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে, তাতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন আমি। একটা কথা পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিই, সশস্ত্র সংঘাতের ক্ষেত্রেও কোনও পক্ষ আন্তর্জাতিক মানবিকতা আইনের ঊর্ধ্বে নয়।" ৭ অক্টোবর হামাস প্রথম হামলা করলেও, আচমকা তা ঘটেনি, বরং দীর্ঘ ৫৬ বছরের জবরদখল এবং তার জেরে উদ্ভুত দমবন্ধ পরিস্থিতির ফলশ্রুতি হিসেবেই তা ঘটেছে বলে জানান। 


গুতারেস যদিও সরাসরি ইজরায়েলের নাম নেননি, কিন্তু তিনি যে ইজরায়েলকেই নিশানা করছেন, তা স্পষ্ট হয়ে যায়। তাতেই চটে যায় ইজরায়েল। হামাসের হামলার সঙ্গে জবরদখলের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন কোহেন। তিনি জানান, ২০০৫ সালে পিছু হটার পর, প্যালেস্তিনীয়দের হাতেই সম্পূর্ণ গাজা তুলে দিয়েছিল ইজরায়েল।  






কিন্তু ইজরায়েলের এই দাবি ঘিরেও তপ্ত হয়ে ওঠে আলোচনা সভা। গাজা থেকে সরে এলেও, ২০০৫ সাল থেকে গাজাকে চারিদিক থেকে ইজরায়েল অবরুদ্ধ করে রেখেছে, গাজায় হামাসের উপস্থিতি সত্ত্বেও ইজরায়েল গাজার ঘাড়ে বসে রয়েছে এবং ওয়েস্টব্যাঙ্কে এখনও ইজরায়েলি দখলদারি কায়েম রয়েছে বলে পাল্টা দাবি ওঠে। সেই নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। সেই আবহেই গুতারেসের পদত্যাগের দাবি তোলে ইজরায়েল। 




আন্তর্জাতিক মহলেও এই মুহূর্তে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ছে ইজরায়েল। সাধারণ মানুষের বসতি এলাকায় মুহুর্মুহু বোমা ফেলার পাশাপাশি, হাসপাতাল, স্কুলও বাদ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও হাসপাতালকে ছোঁয়ার অনুমতি নেই। গাজার বাসিন্দাদের জল, খাবার, বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার এক্তিয়ার নিয়ও উঠছে প্রশ্ন। তা সত্ত্বেও সুর নরম করতে নারাজ ইজরায়েল। বরং গাজাকে আক্রমণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে প্রমাদ গুনছে আন্তর্জাতিক মহল। ইজরায়েল গাজাকে আক্রমণ করলে বিশ্ব অর্থনীতিতে সঙ্কট নেমে আসবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।