নয়াদিল্লি: আর হামলা বা হামলার জবাব নয়, এবার সরাসরি গাজা আক্রমণের হুঁশিয়ারি দিয়ে দিল ইজরায়েল। এই মুহূর্তে গাজায় মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণ করে চলেছে ইজরায়েল। তাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার বসতি এলাকা। পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। সেই আবহেই সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যোগী হয়েছে ইজরায়েল।  আর আকাশপথে বোমা বর্ষণ নয়, গোটা গাজা কার্যত ফুঁড়ে ফেলতে চায় তারা। (Israel Palestine War)


বুধবার ইজরায়েল বনাম প্যালেস্তাইন যুদ্ধ ১৯তম দিনে পা রেখেছে। ইজরায়েলি আক্রমণে সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ জন প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।  এর মধ্যে মঙ্গলবারই শুধুমাত্র ৭০৪ জন মারা গিয়েছেন। আহতের সংখ্যা এখও পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৯৭। অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ৯৬ জন প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা সেখানে ১ হাজার ৬৫০। (Israel Palestine Conflict)


এদিকে, হামাসের হামলায় ১ হাজার ৫০০ ইজরায়েলি নাগরিক মারা গিয়েছেন বলে দাবি উঠছে।  মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক বলে জানানো হয়েছে। হামাসের হাতে মোট ২২২ জন মানুষ এখনও পণবন্দি অবস্থায় রয়েছেন বলে অভিযোগ, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন কিছু বিদেশি নাগরিকও। গাজায় তাঁদের বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে খবর। পণবন্দিদের মধ্যে থেকে সম্প্রতি পর পর চার জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।


আরও পড়ুন: Vladimir Putin: হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত, মাটিতে পড়ে গেলেন পুতিন? ছবি ঘিরে শোরগোল


সেই আবহেই গাজাকে আক্রমণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইজরায়েল। পণবন্দিদের খোঁজ পেতে গাজাবাসীকে আর্থিক পুরস্কারের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা। দেশের প্রতিরক্ষা দফতরের তরফে বলা হয়, "ইজরায়েলি সেনা কথা দিচ্ছে, পণবন্দিদের ব্যাপারে খবর দিতে পারলে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে। আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বও আমাদের। আপনাদের পরিচয়ও কোনও ভাবে প্রকাশ করা হবে না।"


হামাসের উদ্দেশে ইজরায়েলের বার্তা, "শান্তিতে জীবন কাটাতে চাইলে, নিজের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দিতে চাইলে, মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে পণবন্দিদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য সামনে আনা হোক। কোথায়, কতজনকে আটকে রাখা হয়েছে, প্রকাশ করা হোক সব তথ্য।" এখনও পর্যন্ত দুই মার্কিন নবাগরিক এবং দুই ইজরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে হামাস। আগামী দিনে আরও ৫০ জন পণবন্দিকে তারা ছেড়ে দিতে চলেছে বলে শোনা যাচ্ছে।


তবে গাজাকে নিয়ে কড়া অবস্থানই বজায় পরাখছে ইজরায়েল। চারিদিক থেকে কার্যত গাজাকে ঘিরে ফেলেছে তারা। বুধবার সিরিয়াতেও রকেট ছোড়ে তারা। ওয়েস্টব্যাঙ্কে প্রতিরোধের মুখে পড়লে, সেখানেও ড্রোন স্ট্রাইক ঘটানো হয়। তাতে স্থানীয় নাগরিক, চিকিৎসাকর্মী-সহ বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয় বলে খবর।


মঙ্গলবারই নিজেদের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে দেয় ইজরায়েল। দেশের সেনাবাহিনী জানায়, দক্ষিণ সীমান্তে জড়ো হতে শুরু করেছেন  সৈনিকরা। যে কোনও মুহূর্তে গাজা আক্রমণ করতে প্রস্তুত ইজরায়েল।  ইজরায়েলি সেনার চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভি বলেন, "একটা কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিই, আমরা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত।" প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু বলেন, "মাঠে আমাদের যে যোদ্ধারা রয়েছেন, আমাদের সামনে একটিই লক্ষ্য, হামাসকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া। তা না হওয়া পর্যন্ত থামব না আমরা।"


যুদ্ধ পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত থিতিয়ে না এলেও, ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে ঝামেলা মিটিয়ে নিক বলে আন্তর্জাতিক মহলে দাবি উঠছেই। কিন্তু ইজরায়েল গাজা আক্রমণের কথা বলায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে আন্তর্জাতিক মহল। ইতিমধ্যেই নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাইলে কার্যতই দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যাচ্ছে আমেরিকাকে।


ইজরায়েলের ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন করলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, শরিক হিসেবে ইজরায়েলের প্রতি সমর্থন রয়েছে আমেরিকার। কিন্তু তাদেরকেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্য়ালেস্তাইন আক্রমণ নিয়ে বাইডেন জানান, ইজরায়েলের নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তবে ইজরায়েলের ঘোষণায় রীতিমতো শঙ্কিত আন্তর্জাতিক মহল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইজরায়েল প্যালেস্তাইন আক্রমণ করলে বিশ্ব অর্থনীতিতে সঙ্কট নেমে আসবে।