নয়াদিল্লি: লাগাতার বেড়ে চলেছে হতাহতের সংখ্যা। নিন্দায় সরব আন্তর্জাতিক মহল। কিন্তু গাজায় আঘাত হানা থেকে পিছপা হচ্ছে না ইজরায়েল। শনিবার গাজার দু'টি শরণার্থী শিবিরে ফের তারা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ, তাতে কমপক্ষে ৪২ জনের মৃত্যুর খবর মিলছে। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৪৩১ জন প্যালেস্তিনীয়র মৃত্যু হয়েছে গাজায়, যার মধ্যে ১৫ হাজার শিশু রয়েছে। আহতের সংখ্য়া প্রায় ৯০ হাজার। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ১০ হাজার প্যালেস্তিনীয়। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও ১৩৫ শিশু-সহ ৫৪৯ জন মারা গিয়েছেন। আহত ৫ হাজার। আর এই আবহেই ফের মারাত্মক অভিযোগ উঠছে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। ৯/১১ হামলার পর আমেরিকার বিরুদ্ধে বন্দিদের উপর যে নিদারুণ অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছিল, কিউবার গুয়ান্তেনামো বে জেলে যে ধরনের শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে, বর্তমানে প্যালেস্তিনীয়দের উপর ইজরায়েল একই উপায়ে অত্যাচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। (Israel Hamas War)


গত বছর ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস হামলা চালানোর পর তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এবার ইজরায়েলের বিরুদ্ধেও প্যালেস্তিনীয় বন্দিদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানোর অভিযোগ সামনে এল। ইজরায়েলের বন্দিশিবিরে প্যালেস্তিনীয়ের বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি, কুকুর লেলিয়ে দেওয়া, শারীরিক এমনকি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে। প্যালেস্তিনীয় শরণার্থীদের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের যে ত্রাণ সংস্থা রয়েছে, সেই UNRWA-এর একটি রিপোর্টে এই অত্যাচারের বিবরণ উঠে এসেছে। ইজরায়েলের বন্দিশিবির থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত প্যালেস্তিনীয়দের বয়ান রয়েছে ওই রিপোর্টে। (Israel Palestine War)


UNRWA রিপোর্টে বলা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১০০০ প্য়ালেস্তিনীয় বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইজরায়েল। এখনও সেখানকার বন্দিশিবিরে প্রায় ৩০০০ সাধারণ প্যালেস্তিনীয় রয়েছেন। রাজনৈতিক বন্দির সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। কোনও অভিযোগ ছাড়াই সকলকে বন্দি রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। পুরুষ, মহিলা, শিশু, বন্দিতালিকায় রয়েছেন সব বয়সের প্যালিস্তিনীয়ই। এক একটি সেনা বারাকে তাঁদের ১০০-১২০ জনকে রাখা হয়েছিল।  কখনও কখনও জিজ্ঞাসাবাজের জন্য সেখান থেকে বের করা হতো। কীভাবে অত্যাচার চলত, তারও বর্ণনা দিয়েছেন প্যালেস্তিনীয় বন্দিরা। 


আরও পড়ুন: Air Pollution Report: একবছরে বায়ুদূষণে মৃত্যু ৮১ লক্ষ, ছেলে-বুড়ো, বাদ নেই কেউ


রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইজরায়েলের বন্দিশিবিরে বেধড়ক মারধর করা হতো। কখনও নিলডাউন করিয়ে, কখনও উল্টো করে, কখনও হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হতো দীর্ঘক্ষণ।  পরিবার এবং কাছের জনকে মেরে ফেলা, তাঁদের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হতো। কখনও কখনও কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হতো। গালাগালি, নোংরা ভাষায় কথা বলা ছিলই। 


প্যালেস্তিনীয়দের জব্দ করতে ইজরায়েলের বন্দিশিবিরে উচ্চৈঃস্বরে গান বাজানোর পাশাপাশি, কানে তালা লাগে এমন শব্দ শোনানো হতে বলে অভিযোগ। বন্দিদের উপর মূত্রত্যাগ করা হতো বলেও দাবি সামনে এসেছে। প্যালেস্তিনীয় বন্দিদের অভিযোগ, জল, খাবার না দিয়ে রাখা হতো দিনের পর দিন। ঘুমাতে দেওয়া হতো না। ধর্মাচরণ, শৌচকর্মেরও অধিকার ছিল না তাঁদের। পিছমোড়া করে, শক্ত ভাবে হাতে বাঁধা থাকত হ্যান্ডকাফ, যা থেকে ক্ষত তৈরি হতো।


মুক্তিপ্রাপ্ত প্যালেস্তিনীয়রা জানিয়েছেন, মাথা, কাঁধ, কিডনি, ঘাড়, পিঠ এবং পায়ে ভারী বস্তূ দিয়ে আঘাত করা হতো। বন্দুকের বাঁট, ধাতব রড জুতো সমেত লাথি মারা হতো তাঁদের। এই অত্যাচারের ফলে কারও পাঁজর ভেঙেছে, কারও কাঁধের হাড় গিয়েছে, কারও শরীরে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। খাঁচায় পুরে কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হতো বলেও অভিযোগ করেছেন প্যালেস্তিনীয় বন্দিরা। একটি শিশুর শরীরে কুকুরের কামড়ের ক্ষতর উল্লেখও রয়েছে রিপোর্টে। উলঙ্গ করে ঘোরানো এবং তা ক্য়ামেরাবন্দিকরার অভিযোগও এসেছে।


ইজরায়েল যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হামাস প্যালেস্তিনীয় বন্দিদের মিথ্যে বলাচ্ছে বলে দাবি তাদের। এমনকি UNRWA-র ১২ জন কর্মীও ৭ অক্টোবরের ওই হামলায় জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেছে ইজরায়েল। গাজায় UNRWA-র  ১৩ হাজার কর্মীর মধ্যে ৪৫০ জন হামাসের সদস্য বলেও দাবি করেছে তারা।