নয়াদিল্লি: দিল্লির দূষিত বাতাস শ্বাস নেওয়ার উপযুক্ত নয় বলে আগেই ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু শুধুই দিল্লি বা ভারত নয়, এশিয়ার একাধিক দেশের বাতাসই বিষে ভরে গিয়েছে বলে এবার রিপোর্ট সামনে এল। দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বাতাসের সঙ্গে সেখানকার মানুষের শরীরে বাসা বাঁধী মারণ রোগের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের সঙ্গে যোগ রয়েছে এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভারত এবং চিনেই সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান,পৃথিবীর প্রায় ৫৪ শতাংশ। (Air Pollution Report)
UNICEF-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমেরিকার অলাভজন সংস্থা Health Effect Institute-এর তরফে'স্টেট অফ গ্লোবাল এয়ার' শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বায়ুদূষণের প্রভাব লাগাতার বেড়ে চলেছে। এই মুহূর্তে গোটা পৃথিবীতে উচ্চ রক্তচাপে সবচেয়ে বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মারা যান, অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সি সবচেয়ে বেশি শিশু মারা যায় অপুষ্টির জেকে। আর দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে বায়ুদূষণ। প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু, বায়ুদূষণের বলি সকলেই। ২০২১ সালে গোটা পৃথিবীতে ৮১ লসক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল বায়ুদূষণ। (Global Health Data)
শুধু মৃত্যুই নয়, বায়ুদূষণের জেরে মানুষের শরীরে জটিল এবং গুরুতর রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করেছে, যা স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং সমাজের উপর প্রভাব ফেলছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। বলা হয়েছে, অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সি শিশুদের উপর বায়ুদূষণের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। অপরিণত শিশুর জন্ম,সদ্যোজাতর হালকা ওজন, অ্যাজমা, হৃদরোগ, এই সবকিছুর সঙ্গেই যোগ রয়েছে বায়ুদূষণের। ২০২১ সালে বায়ুদূষণ ঘটিত রোগের বলি হয় ৭ লক্ষের বেশি শিশু। অপুষ্টির পর বায়ুদূষণঘটিত রোগেই সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয় ওই বছর। এর মধ্যে ৫ লক্ষ শিশু গার্হস্থ্য বায়ুদূষণের বলি হয়। এশিয়া এবং আফ্রিকায় বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত জ্বালানির দূষণকে এর নেপথ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। বায়ুদূষণের জেরেই শিশুদের শরীরে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, বাসা বাঁধছে বলে দাবি তাঁদের। ঘরে ঘরে রান্নার গ্যাস, ইনডাকশনের ব্যবহার, স্বাস্থ্য পরিষেবা, খাদ্য়ের পুষ্টিগুণ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দু'দশক আগের চেয়ে বর্তমানে শিশুমৃত্যুর হার কমলেও, বায়ুদূষণ নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
স্থান | মোট জনসংখ্যা | অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সি শিশু |
১ | উচ্চ রক্তচাপ | অপুষ্টি |
২ | বায়ুদূষণ | বায়ুদূষণ |
৩ | তামাকসেবন | বিশুদ্ধ জল, পরিচ্ছন্নতার অভাব |
৪ | ডায়েট | তাপমাত্রার হেরফের |
৫ | হাই ফাস্টিং প্লাজমা গ্লুকোজ | তামাকদ্রব্য |
আরও পড়ুন: UAE Abortion Law: সিদ্ধান্ত নেবেন মেয়েরাই, ধর্ষণে গর্ভপাতে সায় আমিরশাহির, আমেরিকা এখনও লড়ছে
বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণা (PM2.5), গার্হস্থ্য বায়ুদূষণ, ওজোন এবং নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড পৃথিবীর সর্বত্র মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে বলে দাবি গবেষকদের। ২০০টি দেশের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, প্রতিদিন পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নেন, যার দীর্ঘমেয়াদি কুফল রয়েছে। বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণাগুলি ফুসফুসে থেকে যায়, রক্তের সঙ্গেও মিশে যায়। ফলে একাধিক অঙ্গের ক্ষতি হয়। এই কারণেই হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়বিটিস, ফুসফুসের ক্যান্সার, এবং ক্রনিক পালমোনারি ডিজিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওজোনের সংস্পর্শে এসে ২০২১ সালে ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫১৮ জন মারা গিয়েছেন।
গবেষকরা জানিয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি, গার্হস্থ্য জ্বালানি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা, শিল্পকর্ম এবং দাবানল থেকে বাতাসে সূক্ষ্ম ধূলিকণা PM 2.5-এর সৃষ্টি হয়। এতে মানুষের শরীরে যেমন প্রভাব পড়ে, তেমনই গ্রিনহাউস গ্য়াসের নির্গমন বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীও ক্রমশ উষ্ণ হয়ে উঠছে। ফলে বায়ুদূষণ এবং জলবায়ুঘটিত কারণ, দুইয়ের প্রভাবই পড়ছে মানুষের শরীরে।