কলকাতা : আজ সমাজের সব ক্ষেত্রে সামনের সারিতে মহিলারা। কিন্তু, অষ্টাদশ বা ঊনবিংশ শতকে পথটা অত সহজ ছিল না মহিলাদের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে বাঙালি বিধবাদের। তাঁদের করুণ পরিণতির কথা বহু চর্চিত। এহেন বিধবাদের দুঃখ মোচন করে সমাজ সংস্কারে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রণী। তিনি "জ্ঞানের সাগর" ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী।
১৮৫৬ সাল। এই বছরেই বিদ্যাসাগরের কঠোর পরিশ্রম মান্যতা পায়। বিধবা বিবাহ আইন প্রচলিত হয়। শোনা যায়, বহু টাকা খরচ করে তিনি বিবাহ দিয়েছেন একের পর এক বিধবার। এর জেরে তাঁর ওপর চেপে বসে অনেক আর্থিক দায়ভার। ধার বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তৎকালীন সময়ে যা প্রচুর।
বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের। বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা ভগবতী দেবী। খুব অল্প বয়সেই পড়াশোনার জন্য কলকাতায় চলে আসেন বিদ্যাসাগর। মাত্র ৯ বছর বয়সে। ওঠেন ভগবত চরণের ঠিকানায়। সেখানে একবারের জন্যও তিনি থাকতে অস্বস্তি বোধ করেননি। ভগবতের বড় পরিবার তাঁকে আপন করে নিয়েছিলেন। ভগবতের ছোট কন্যার সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা জানা যায় বিদ্যাসাগরের। বলা হয়, তিনিই নাকি ভারতে মহিলাদের অগ্রগতিসাধনে বিদ্যাসাগরকে প্রভাবিত করেছিলেন।
খুব অল্প বয়স থেকেই জ্ঞানের প্রতি অগাধ খিদে ছিল বিদ্যাসাগরের। এতটাই যে বাড়িতে গ্যাস ল্যাম্পের ব্যবস্থা না হলে রাস্তার আলোতেও পড়াশোনা করেছেন। সাফল্যের সঙ্গে ছাত্রজীবন শেষ করেও, জ্ঞানের প্রতি অসীম খিদেই তাঁকে জ্ঞানের সাগরে পরিণত করেছিল। সংস্কৃত কলেজের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্কের কথাও সুবিদিত। সংস্কৃত ব্যাকারণ, সাহিত্য, বেদান্ত, জ্যোর্তিবিজ্ঞান সহ বিভিন্ন বিষয়ে ছিল তাঁর অগাধ পারদর্শিতা। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে করেছেন সংস্কৃতয় অধ্যাপনা। কিন্তু, বিদ্যাসাগর বোধ করেন যে তিনি সমাজে আরও বৃহত্তর অবদান রাখতে চান। মহিলাদের অগ্রগতি। তাঁদের অধিকারের জন্য শুরু হয় লড়াই। এর জন্য বহু প্রতিবন্ধকতারও মুখোমুখি পড়তে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু, তাঁর কঠোর পরিশ্রমের জেরে ১৮৫৬ সালে চালু হয় বিধবা বিবাহ আইন। এহেন মহাপুরুষকে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য।