নয়াদিল্লি: ৫ দিন আগে প্রথম দেশীয় করোনা টিকার মানব শরীরে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর। গতকাল তারা জানিয়ে দিয়েছে, ১৫ অগাস্টের মধ্যেই এই টিকা বাজারে আনতে হবে। কিন্তু এই ব্যস্ততা ভাল চোখে দেখছেন না বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। তাঁদের মতে, এত জটিল রোগ নিয়ে এত তাড়াহুড়ো করা অবৈজ্ঞানিক।


টিকাটির নাম কোভ্যাক্সিন, যুগ্মভাবে তৈরি করেছে হায়রাবাদের ভারত বায়োটেক ও আইসিএমআর। আইসিএমআর বলে দিয়েছে, মানব শরীরে পরীক্ষার সম্মতি মেলার ২ মাসের মধ্যে তারা টিকাটি বাজারে আনতে চায়। এ মাসের ২ তারিখ আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল বলরাম ভার্গব দেশের ১২টি সংস্থাকে চিঠি লিখে মানব শরীরে টিকা পরীক্ষার জন্য দ্রুত সব ব্যবস্থা করতে বলেন। বলেন, যাঁদের ওপর এই টিকা পরীক্ষা হবে, ৭ তারিখের মধ্যে নাম নথিভুক্ত করতে হবে তাঁদের। এই টিকা তৈরিকে কেন্দ্র সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, নির্দেশমত না চললে কঠোর ব্যবস্থারও হুঁশিয়ারি দেওয়াছিল চিঠিতে।

কিন্তু এত তাড়াহুড়ো অনেক বিশেষজ্ঞ ভাল চোখে দেখছেন না। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল এথিক্সের সম্পাদক অমর জেসানি বলেছেন, মানব শরীরে পরীক্ষা শুরুর আগেই গোটা বিশ্বে কেউ এভাবে নতুন টিকা আনার দিন ঠিক করেছে বলে আগে শুনিনি। বিজ্ঞানে এভাবে কাজ হয় না বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।   আইসিএমআর-এর বায়োএথিক্স সেলের এথিক্স অ্যাডভাইসরি কমিটির চেয়ারপার্সন বসন্তা মুথুস্বামীও বলেছেন, টিকা তৈরির পক্ষে সময়টা বড় অল্প। যদি খুব দ্রুতও কাজ করা হয়, তাহলেও অন্তত ১ বছর লাগার কথা।

অথচ সরকারের যে নিজস্ব ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এজেন্সি, তা বলছে, এই ট্রায়ালের সময়সীমা ১ বছর ৩ মাস। যে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৭টি স্বশাসিত এথিক্স কমিটিগুলি থেকে এখনও কাজ শুরু করার সবুজ সংকেতই পায়নি। ওড়িশার ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস ও এসইউএম হাসপাতালের প্রধান ভেঙ্কট রাও বলেছেন, সবুজ সংকেত না পেলে কাজে হাত দেবেন না তিনি। একইভাবে এথিক্স কমিটির সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে লখনউয়ের কিং জর্জ হাসপাতাল। যাঁদের ওপর পরীক্ষা হবে ৭ তারিখের মধ্যে তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করা অসম্ভব বলে তারা জানিয়েছে। ওদিনের মধ্যেখুব বেশি হলে এথিক্স কমিটির সম্মতিপত্র আসা সম্ভব, তার বেশি কিছু নয় বলে তাদের ধারণা। কর্নাটকের বেলগাঁওয়ের জীবনরেখা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য ট্রায়ালের জন্য তৈরি। তাদের বক্তব্য, ১৫ অগাস্টের মধ্যে ১১০ শতাংশ না হোক, ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ করা সম্ভব। সরকার যখন ওই তারিখ ঠিক করেছে, কিছু একটা ভেবেই করেছে।

১২টি কেন্দ্রে ১,১২৫ জনের ওপর এই পরীক্ষা হবে বলে ঠিক হয়েছে। ১৫ অগাস্টের মধ্যে ট্রায়ালের ফল সম্পূর্ণ জানা যাবে না বলে কোনও কোনও চিকিৎসক মনে করছেন।