নয়াদিল্লি: পরের দিনের কর্মসূচিও ঠিক করে রেখেছিলেন। তার মধ্যেই উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা। জগদীপ ধনকড়ের এহেন সিদ্ধান্ত নিয়ে শোরগোল গোটা দেশে। হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন ধনকড়, তা নিয়ে একাধিক তত্ত্ব উঠে আসছে। ধনকড় নিজের স্বাস্থ্যজনিত কারণ তুলে ধরলেও, বিষয়টি মানতে পারছেন না বিরোধীরাও। নরেন্দ্র মোদি সরকার তাঁকে উপরাষ্ট্রপতির পদে বসালেও, রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন করলেও, তিনি লাগাতার উপেক্ষার শিকার হচ্ছিলেন বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। পাশাপাশি, কেন্দ্রের দুই মন্ত্রী জেপি নাড্ডা এবং কিরেণ রিজিজুর আচরণে ধনকড় অসন্তুষ্ট হন বলেও দাবি উঠে আসছে। ধনকড়ের ইস্তফার সঙ্গে এবার বিহারের নির্বাচনও জুড়ে গেল। ধনকড়ের জায়গায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা সংযুক্ত জনতা দলের (JD-U) প্রধান, নীতীশ কুমারকে উপরাষ্ট্রপতি করা হতে পারে বলে খবর। (Jagdeep Dhankhar Resignation)

ধনকড়ের জায়গায় নীতিশকে উপরাষ্ট্রপতি করার দাবি কোনও JD(U) নেতা করছেন না। বরং বিজেপি-র অন্দরেই নীতীশকে পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি করার উঠছে। বিহারে বিজেপি-র বিধায়ক হরিভূষণ ঠাকুর সংবাদ সংস্থা ANI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “জগদীপ ধনকড় স্বাস্থ্যজনিত কারণে ইস্তফা দিয়েছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। তবে নীতীশ কুমার উপরাষ্ট্রপতি হলে বিহারের মানুষজন আনন্দিতই হবে। উনি উপরাষ্ট্রপতি হলে, তা বিহারের সৌভাগ্য।” বিহারের মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা প্রেমকুমারও এব্যাপারে একমত। তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় সরকারই এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বিহার থেকে কেউ উপরাষ্ট্রপতি হলে আমি খুশি হব।” বিহারের আর এক মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা নীরজ কুমার সিংহ বাবলু বলেন, “ভালই তো। উনি উপরাষ্ট্রপতি হলে সমস্যার কী আছে?” (Nitish Kumar as Vice President)

নীতীশকে উপরাষ্ট্রপতি করা হতে পারে বলে যে দাবি উঠছে, তার নেপথ্যে একাধিক কার্যকারণও উঠে আসছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সামনেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। ভোটার তালিকা সংশোধন ঘিরে তরজা চলছেই। বিজেপি-কে জেতাতে নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃত ভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম ভোটারতালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। এখনও পর্যন্ত একবারও বিহারে নিজের ক্ষমতায় জয়ী হয়নি বিজেপি। তাই নীতীশ এবং তাঁর দলকে জোটসঙ্গী হিসেবে প্রয়োজন গেরুয়া শিবিরের। কিন্তু এবারের বিধানসভা নির্বাচনে আসন বাড়বে বলে আশাবাদী বিজেপি। সেক্ষেত্রে নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে, একাধিক সিদ্ধান্তে সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, সত্তরোর্ধ্ব নীতীশের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ন্যস্ত করা নিয়ে রাজ্য বিজেপি থেকে আপত্তি উঠছে। কিন্তু নীতীশকে চটাতে নারাজ বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই তাঁকে উপরাষ্ট্রপতি করতেই ধনকড়কে সরানো হয়েছে বলেও জল্পনা শুরু হয়েছে।

সোমবার সন্ধেয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠান ধনকড়। মঙ্গলবার সকালে জানা যায়, তাঁর ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়েছে। মঙ্গলবার সংসদেও আসেননি ধনকড়। তাঁর পরিবর্তে চেয়ারে দেখা যায় JD(U)-এর হরিবংশ নারায়ণ সিংহকে। বাদল অধিবেশন চলাকালীন আপাতত তিনিই রাজ্যসভার অধিবেশন চালিত করবেন বলে জানা গিয়েছে। ২০২০ সাল থেকে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান আসীন রয়েছেন হরিবংশ। বিহারে বিধানসভা নির্বাচন না মেটা পর্যন্ত তিনিই রাজ্যসভা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। নীতীশ কুমার অত্যন্ত কৌশলী রাজনীতিক। বিহারে বারংবার ক্ষমতাসীন সরকারের সমীকরণ বদলালেও, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চেয়ার ধরে রাখতে সফল হয়েছেন নীতীশ। বার বার শিবির বদলের জন্য ‘পল্টুরাম’ তকমা জুটলেও, নিজের নীতি থেকে একচুল সরেননি তিনি। 

কিন্তু শেষ পর্যন্ত নীতীশ উপরাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন কিনা, সেই নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। কারণ নীতীশ যদি উপরাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে বিহারের রাজনীতিতে তাঁর ছেলে নিশান্ত কুমারের সমস্ত সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। কারণ পরিবারতন্ত্রের দোহাই দিয়ে ইতিমধ্যেই নিশান্তের বিরোধিতা শুরু হয়েছে। নীতীশ বিহার থেকে সরে গেলে, ছেলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও টালমাটাল হয়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে শেষ পর্যন্ত নীতীশ কী সিদ্ধান্ত নেন, তা বিহার বিধানসভা নির্বাচনের পরই বোঝা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিজেপি-র থেকে JD(U)-এর আসন সংখ্যা কম হলে, তবেই নীতীশকে উপরাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণে রাজি করানো সহজ হবে বলে  মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। যদি না নীতীশ ফের শিবির বদল করেন।