নয়াদিল্লি: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া থেকে উপরাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়া। প্রচারের আলোয় উঠে আসার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে বিতর্ক। কিন্তু কী এমন ঘটল যে হঠাৎ উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিতে হল জগদীপ ধনকড়কে? বিরোধীদের প্রশ্নের মধ্যেই এবার নয়া তত্ত্ব উঠে এল। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি তথা রাজ্যসভা সাংসদ জেপি নাড্ডা এবং কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর আচরণে ধনকড় অসন্তুষ্ট হয়ে থাকবেন বলে খবর সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে। (Jagdeep Dhankhar News)
স্বাস্থ্য়জনিত কারণ দেখিয়ে সোমবার ইস্তফা দেন ধনকড়। মঙ্গলবার তাঁর সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণও করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত ধনকড়ের, সেই নিয়ে জল্পনার মধ্যেই নতুন তথ্য সামনে এল। জানা গিয়েছে, সোমবার ধনকড়ের ডাকা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন নাড্ডা এবং রিজিজু। তাতে অসন্তষ্ট হন ধনকড়, অসম্মানিত বোধ করেন। কংগ্রেসও এই তত্ত্ব তুলে ধরেছে। যদিও নাড্ডার দাবি, তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সেকথা জানিয়েওছিলেন ধনকড়কে। (Jagdeep Dhankhar Resignation)
সোমবার রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন হিসেবে বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন ধনকড়। সরকারি কাজকর্ম কীভাবে এগোবে, কখন, কোন বিল পেশ হবে, তা ওই বৈঠকেই ঠিক হওয়ার কথা ছিল। দুপুর ১২.৩০টা নাগাদ প্রথম বৈঠকটি হয়। সেই বৈঠকে নাড্ডা, রিজিজু উপস্থিত ছিলেন। কিছু ক্ষণ আলোচনার পর বিকেল ৪.৩০টেয় ফের আলোচনা হবে বলে ঠিক হয়। সেই মতো বৈঠক ঠিক হলেও, সেখানে নাড্ডা এবং রিজিজু অনুপস্থিত ছিলেন। বরং সরকারের তরফে প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় মন্দ্রী এল মুরুগানকে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, দু’-দু’বার বৈঠকে বসেও শেষ পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়নি। এতে পরের দিন বৈঠক রাখতে ধনকড়কে অনুরোধ করেন মুরুগান। কিন্তু এই প্রস্তাব মনঃপুত হয়নি ধনকড়ের। বরং গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে নাড্ডা এবং রিজিজুর অনুপস্থিতি সমীচীন বলে মনে হয়নি তাঁর। এর পরই সটান ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন রাষ্ট্রপতিকে। ধনকড় যদিও সেই নিয়ে কিছু জানাননি এখনও পর্যন্ত। স্বাস্থ্যজনিত কারণে পদ ছাড়ছেন বলে গতকাল জানিয়েছিলেন তিনি।
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে নাড্ডা জানিয়েছেন, সংসদের কাজে আটকে গিয়েছিলেন তিনি ও রিজিজু। ধনকড়কে সেকথা জানিয়েওছিলেন। নাড্ডা বলেন, “বিকেল ৪.৩০টেয় উপরাষ্ট্রপতির ডাকা বৈঠকে যেতে পারিনি কিরেণ রিজিজু এবং আমি। অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলাম আমরা। সেকথা জানিয়ে দিয়েছিলাম সময় থাকতেই।” তবে কংগ্রেসের তরফে নাড্ডার একটি মন্তব্যকে তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “কিছু রেকর্ডে থাকবে না। শুধু আমার কথাই রেকর্ডে থাকবে।” চেয়ারপার্সন যেখানে আসনে বসে রয়েছেন, সেখানে নাড্ডা কী করে নির্দেশ দিতে পারেন, সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস। নাড্ডা আসলে রাজ্যসভার চেয়ারপার্সনকেই অপমান করেছেন বলে অভিযোগ তোলে তারা। যদিও নাড্ডার দাবি, তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে ওই মন্তব্য করেছিলেন। চেয়ারপার্সনকে নির্দেশ দেননি।
কিন্তু কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, বিষয়টি মোটেই সহজ নয়। তাঁর দাবি, ধনকড়কে কিছু জানাননি নাড্ডা এবং রিজিজু। বৈঠকে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। জয়রাম বলেন, “নাড্ডা এবং রিজিজুর জন্য দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু ওঁরা বৈঠকে আসেননি। দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী যে আসছেন না, তা নিয়ে জগদীপ ধনকড়কে কিছু জানানো হয়নি আলাদা ভাবে। তাতে আজ দুপুর ১টায় ফের বৈঠক ঠিক হয়।”
এমনি এমনি ধনকড় এই সিদ্ধান্ত নেননি, এর নেপথ্যে গুরুতর কারণ রয়েছে বলে মত জয়রামের। তাঁর কথায়, ‘২০১৪ সালের পর থেকে ভারতের প্রশংসাই করেছেন ধনকড়। পাশাপাশি, কৃষকের অধিকারের কথা তুলে ধরেছেন বার বার। বিচারব্যবস্থাকে নিয়েও মন্তব্য করেছেন। উনি নিয়ম, মর্যাদার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু উপেক্ষিত হচ্ছেন বলে মনে হয়েছিল ওঁর’।
গতকাল দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪.৩০টের মধ্যে কিছু এমন ঘটে থাকবে, যার জন্য ধনকড় সরাসরি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মত জয়রামের। মঙ্গলবার বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনেও অনুপস্থিত ছিলেন ধনকড়। পরে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। বিরোধীদের প্রশ্ন, গতকাল অধিবেশনের পরও সকলের সঙ্গে কথা হয় ধনকড়ের। হাসিমুখে কথাও বলেন তিনি। তখনও পর্যন্ত পদত্যাগ করছেন বলে কোনও ইঙ্গিত দেননি। হঠাৎ কী হল যে সন্ধেয় পদ ছাড়তে হল তাঁকে, তার জবাব খুঁজছেন সকলে।