কলকাতা: বুধবার রাতে মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনে  আক্রান্ত হয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেন।   বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হন মন্ত্রী। রেলের আধিকারিকরা বলেছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এটি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বেরই ফলশ্রুতিই।  গতকাল রাতে মুর্শিদাবাদের নিমতিতা রেল স্টেশনে কলকাতায় আসার জন্য ট্রেনের অপেক্ষা করছিলেন মন্ত্রী। সেই সময়ই বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। 
রেলের আধিকারিকরা বলেছেন, এই ঘটনা তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে হতে পারে বা রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে বাম দলের লড়াইয়ের জেরেও হতে পারে। 
বামদলগুলি গত সপ্তাহে নবান্নর সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচীর আয়োজন করেছিল। এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চালিয়েছিল। এক বাম কর্মী লাঠিচার্জে জখম হয়েছিলেন। পরে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনা নিয়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। 
চলতি কৃষক বিক্ষোভের সমর্থনে বামদলগুলি বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় রেল রোকো-র ডাক দিয়েছিল। 
রেলের এক আধিকারিক সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন যে, তৃণমূলের লোকজনদের মধ্যেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের খবর রয়েছে। জাকির হোসেন নিজেই ২০১৭-তে দুই তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ওই দুজন তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। 


ওই আধিকারিক বলেছেন, মন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনা প্রাথমিকভাবে বামেদের সঙ্গে তৃণমূলের রাজনৈতিক লড়াইয়ের ফলশ্রুতি হতে পারে। এক্ষেত্রে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বেরও যোগ থাকতে পারে।  এই ঘটনায় বিশৃঙ্খলার জেরে ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হয় এবং সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। 
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কিছু লোক জাকির হোসেনের ওপর দল বদলের জন্য চাপ দিচ্ছিল। এজন্য তাঁর ওপর হামলা ষড়যন্ত্রেরই অঙ্গ। 
বুধবার রাতের ঘটনায় জখম মন্ত্রীকে দেখতে মুখ্যমন্ত্রী এসএসকেএমে গিয়েছিলেন। তিনি এই ঘটনায় রেলের গা-ছাড়া মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ,  মন্ত্রী জাকির হোসেনের ওপর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমান, দূর থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বোমা ফাটানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, এটা একটা চক্রান্ত। কেউ কেউ গত কয়েকমাস ধরে ওর ওপর দল বদলের জন্য চাপ তৈরি করছিল। এখন তদন্ত চলছে। তাই কারুর নাম করতে চাই না। 
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, হামলাকারীরা জাকির হোসেনের গতিবিধি সম্পর্কে জানত এবং তাঁর পিছু ধাওয়া করছিল। 


অভিযুক্তদের ধরতে সিআইডি-কে তদন্তভার দিয়েছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রেলওয়ে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে মন্ত্রীর ওপর হামলার নিন্দা করেছে এবং বলেছে, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ত্রাণ ও উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং জখমদের নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে আরপিএফ ও রেল কর্তৃপক্ষ। 
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের ব্যাপার। এ ব্যাপারে দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের। রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের আইন-শৃঙ্খলাও রাজ্য সরকারের জিআরপি-ওর আওতাধীন।