ফের ভূমিকম্প জাপানে। রিখটার স্কেলে ৭.৬ মাত্রায় কেঁপে উঠল সে দেশের উপকূলবর্তী এলাকা। যার জেরে সুনামি সতর্কবার্তা জারি করতে হল। প্রায় তিন মিটার উঁচুতে উঠে যায় ঢেউ। এমনই জানিয়েছে জাপান Japan Meteorological Agency (JMA)। যার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মানুষ।
স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১৫ মিনিট নাগাদ জাপানের উত্তর ও পূর্ব প্রান্ত কেঁপে ওঠে। প্রভাব পড়ে হোকাইডো, আমেরি এবং ইওয়াতে এলাকায়। ভূমিকম্পের সময়ে কেঁপে ওঠা বিভিন্ন ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, ঝাড়বাতি এবং বিভিন্ন গাড়ি দুলে উঠছে। এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, "এক মিনিটের বেশি কম্পন অনুভূত হয়েছে।"
গত জুলাই মাসে রাশিয়ার ভূমিকম্পের পরেই ২৫ ফুটেরও বেশি উঁচু রাক্ষুসে ঢেউ আছড়ে পড়ে প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলবর্তী কামচাটকায়। সুনামি আছড়ে পড়ে জাপানের হোক্কাইডো, আমেরিকার আলাস্কা এবং হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জেও। জাপানের উপকূল-লাগোয়া এলাকা থেকে ৯ লক্ষ বাসিন্দাকে সরে যেতে বলা হয়।
জাপানে একাধিক জায়গায় দৈত্যাকার ঢেউ আছড়ে পড়ে। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা জানায়, হোকাইডোর পূর্ব উপকূলে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার (প্রায় ১ ফুট) উচ্চতার সুনামির ঢেউ দেখা গিয়েছে। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুনামি শুরু হয়ে যায়। সতর্কতা জারি করা হয়, আলাস্কা, হাওয়াই, চিলি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণে নিউজিল্যান্ডের উপকূলীয় অঞ্চলে ।
জাপান এমনিতেই ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবে গণ্য হয়। ভূমিকম্প এবং তার দরুণ উদ্ভুত সুনামি জাপানে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে আগেও সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেই নিয়ে গত মার্চ মাসেই পাঁচ বছরব্যাপী একটি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। বিজ্ঞানীরা জানান, জাপান উপকূলের ঠিক উল্টো দিকে, সমান্তরাল ভাবে যে চিশিমা পরিখা রয়েছে, তার নীচে মাটির গঠন অত্যন্ত বিপজ্জনক। সেখানে প্রশান্ত মহাসাগরীয় টেকটোনিক পাতটি নর্থ আমেরিকান পাতের নীচে ঢুকে রয়েছে। ফলে একটি ২২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যুতিরেখার সৃষ্টি হয়েছে। একটু এদিক ওদিক হলেই ভূমিকম্পের তীব্রতা রিখটার স্কেলে ৯ ছুঁয়ে ফেলতে পারে। সুনামি আছড়ে পড়লে ঢেউয়ের উচ্চতা হতে পারে ২০ মিটার পর্যন্ত। আবার হোক্কাইদোর পূর্বে কুরিল-কামচাটকা পরিখাও রয়েছে। আজ থেকে ৪০০ বছর আগে তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ওই অঞ্চল। তাতে জলভাগের দিক থেকে একটি পাত স্থলভাগের দিকে প্রায় ২৫ মিটার সরে আসে বলে জানা যায়। সেই থেকে যদি বছরে ৮ সেন্টিমিটার করেও ওই পাতটি সরে আসতে থাকে স্থলভাগের দিকে, তাতেও তীব্র ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য় অনুযায়ী, জাপান উপকূলে সাগরের নীচে কমপক্ষে ১৫টি বিপজ্জনক চ্যুতিরেখা রয়েছে। দিনের বেলা বিপর্যয় ঘটলে কী হতে পারে, রাতে হলে কী হতে পারে, গ্রীষ্মকালে ঘটলে কী হবে, শীতকালে কী পরিণতি হতে পারে— এমন ৯০ প্রকারের পরিকল্পনাও ছকে রাখা হয়েছে।