নয়াদিল্লি: বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিনের পরিবর্তে ভুল করে কম ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়েছিলেন পাইলট। আর তাতেই যাত্রীসমেত গোটা বিমান ভেঙে পড়ে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে এবার এমনই তথ্য় উঠে এল। গত বছর ডিসেম্বরে ভয়ঙ্কর ওই দুর্ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি তদন্তের রিপোর্টে যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। (Jeju Air Plane Crash)

Continues below advertisement


Jeju Air Plane-এর যে বিমানটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়, সেটি ছিল বোয়িংয়ের তৈরি ৭৩৭-৮০০ বিমান। ঠিক কী ঘটেছিল, এখনও তা নিয়ে তদন্ত চলছে। গত ১৯ জুলাই সেই নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেন তদন্তকারীরা, তাতে পাইলটের ভূমিকার উল্লেখ রয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স রিপোর্টটির খুঁটিনাটি তুলে ধরেছে। আর তাতেই চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। (South Korea Plane Crash)


রয়টার্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাখির ধাক্কায় বিমানের ডান দিকের ইঞ্জিনের তুলনায় বাঁ দিকের ইঞ্জিনটি কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু পাখি ধাক্কা মারার ১৯ সেকেন্ডের মাথায় বাঁ দিকের ইঞ্জিনটিই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ডান দিকের ইঞ্জিনটির উপর চাপ বেড়ে যায়। আগুন ধরে গিয়ে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে। তবে সেই অবস্থাতেও বিমানটির জন্য ইঞ্জিনটি যথেষ্ট ছিল বলেও মত তদন্তকারীদের। কিন্তু বাঁ দিকের ইঞ্জিনটি কি তাহলে ভুল করে বন্ধ করে দিয়েছিলেন পাইলট, উঠছে প্রশ্ন। 



তদন্তকারীদের এই রিপোর্ট নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াতেও বিতর্ক শুরু হয়েছে। নিহতদের পরিবারের আপত্তিতে রিপোর্টটি প্রকাশ করা যায়নি এখনও পর্যন্ত। রয়টার্স আলাদা ভাবে রিপোর্টটি দেখেছে। পাইলট কেন ভুল ইঞ্জিন বন্ধ করলেন, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই রিপোর্টে। চূড়ান্ত রিপোর্ট আসতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, একাধিক কারণে বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। একটি মাত্র ভুল হলে, তার বিকল্পও থাকে। তাই উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কারও ঘাড়ে দোষ চাপানো ঠিক নয়। তবে ভুল ইঞ্জিন বন্ধ করে দেওয়ার যে রিপোর্ট উঠে এসেছে, তাতে ১৯৮৯ সালে ইংল্যান্ডে বোয়িংয়ের ৭৩৭-৪০০ বিমানের দুর্ঘটনার স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে। সেবার ভুলবশত কম ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়েছিলেন পাইলটরা। ওই দুর্ঘটনার পর উড়ান পরিষেবা সংক্রান্ত বিধিনিয়মে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। রয়টার্সের দাবি Jeju Air Plane সংস্থার বিমানটি যে ভেঙে পড়ে, তাতে ভুল ইঞ্জিন বন্ধ করে দেওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারে যে কথোপকথন ধরা পড়েছে, কম্পিউটার ডেটা এবং ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি সুইচও তেমন ইঙ্গিত দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটি যে কাজ করছিল, তার উপর পর করেই যে অত ক্ষণ আকাশে ভেসেছিল বিমানটি, তার উল্লেখও রয়েছে রিপোর্টে।


গত ২৯ ডিসেম্বর তাইল্যান্ড থেকে ফেরার সময় দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভেঙে পড়ে Jeju Air Plane সংস্থার যাত্রীভর্তি একটি বিমান। অবতরণের সময় সটান গিয়ে বিমানবন্দরের দেওয়ালে ধাক্কা মারে বিমানটি। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা চারিদিক গ্রাস করে নেয়। 


পরবর্তীতে জানা যায়, মাঝ আকাশে পাখির হানায় কাবু হয়ে যায় বিমানটি। জরুরি পরিস্থিতিতে মুয়াং বিমানবন্দরে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন পাইলট। কিন্তু বিমানবন্দর ছোঁয়ার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে চাকা খোলেনি। ফলে বিমানের পেটই রানওয়ে ছোঁয়। গতি কমাতে না পারায়, ঘষতে ঘষতেই দুরন্তগতিতে ছুটে গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা মারে বিমানটি। মোট ১৮১ জন যাত্রী সওয়ার ছিলেন বিমানে, দু’জন ছাড়া সকলেই ঝলসে মারা যান দুর্ঘটনায়। 


জরুরি অবতরণের সময় ঘটে যায় দুর্ঘটনা। চাকা না খোলায়, পেটে ভর করে মাটি ছোঁয় বিমান। তার পরও গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ফলে সটান দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা মারে যাত্রীভর্তি বিমান। আর তাতেই আগুনের গোলা ঝলসে শেষ হয়ে যায় সবকিছু।