নয়া দিল্লি: দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের উড়ল লাল পতাকা। দেশের অন্যতম সেরা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জয়ের শেষ হাসি হাসল বাম ছাত্র মোর্চার প্রার্থীরা। ফের একবার পরাজয়ের মুখ দেখতে হল RSS-এর ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদকে। হাজারো চেষ্টা করেও JNU-তে দাঁত ফোটাতে পারল না তারা। JNU-তে গত ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলার মেয়ে ঐশী ঘোষ। এবারে সেই পদে ধনঞ্জয়। 


প্রায় ৩০ বছর পর এই প্রথম কোনও দলিত নেতা জেএনইউ ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলেন। ১৯৯৬ সালে বাত্তিলাল বৈরওয়া জেএনইউ ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম কোনও দলিত প্রার্থী ছিলেন। 


রবিবার দিনভর গণনা শেষে দেখা যায়, JNU-তে লালদুর্গ অক্ষুন্ন রেখেছে বামেরা। ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সভাপতি পদে বাম প্রার্থী ধনঞ্জয়ের প্রাপ্তি ২৫৯৮টি ভোট। ২৪০৯টি ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বাম ছাত্র মোর্চার প্রার্থী অভিজিৎ ঘোষ। সাধারণ সম্পাদক পদে বাম সমর্থিত প্রার্থী প্রিয়ংশী আর্য জয়ী হয়েছেন ২৮৮৭টি ভোট পেয়ে। ২৫৭৪টি ভোট পেয়ে যুগ্ম সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন বাম প্রার্থী মহম্মদ সাজিদ। 


দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড অ্যাসথেটিক্স এর পিএইচডি-র ছাত্র ধনঞ্জয় বিহারের গয়ার বাসিন্দা। পরিবারের সবচেয়ে ছোট সে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী। অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ((AISA)'র প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, যেভাবে তাঁকে বর্ণবৈষম্যর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, সেটাই তাঁর জীবনে লড়াইয়ের আগুনকে আরও জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ছোট থেকেই পড়াশুনো করে পরিবারের পাশে থাকতে হবে, এই খিদে ছিল। দলের তরফে এও বলা হয়েছে ধনঞ্জয়কে যেভাবে বর্ণবৈষম্যর শিকার হতে হয়েছে তেমনটা বোধহয় খুব কম মানুষকেই হতে হয়। 


খুব ছোট থেকেই জাতপাত, বর্ণবৈষম্যকে কাছ থেকে দেখেছেন ধনঞ্জয়। বাবা পুলিশকর্মী হলেও সমাজে তাঁর পরিবারকে মান্যতা দেওয়া হয়নি কখনই। সেই ধাক্কা থেকেই ধনঞ্জয়ের বাবা চাইতেন ছেলে ভাল করে পড়াশোনা করে ইজ্ঞিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হোক। তাহলে হয়তো সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবেন। ছোট থেকেই লেখাপড়ায় তুখোড় ধনঞ্জয় অবশ্য পরিবারের অর্থনৈতিক অসচ্ছ্বলতার কারণে সরকারি কলেজে ভর্তি নিশ্চিত করতে পারেননি। আর বেসরকারি কলেজ ছিল পরিবারের সাধ্যের অতীত। 


ছোটবেলার ফেলে আসা দিনগুলিকে মনে রেখে এবারের প্রচারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয় সামনে এনেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে উচ্চশিক্ষায় ফান্ডিং, এজেন্সি লোন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ক্যাম্পাসে জল, স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামো সংক্রান্ত নানা সুবিধাকে আরও বৃদ্ধি করার দাবি তিনি তোলেন। 


সোমবার সংবাদসংস্থা পিটিআই'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ধনঞ্জয় বলেন, "এই জয় জেএনইউ-এর ছাত্রদের গণভোট ৷ যে তাঁরা ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ছাত্ররা আবারও আমাদের উপর তাদের আস্থা দেখিয়েছে। আমরা তাঁদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। ছাত্রদের যে যে বিষয়ে সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে কাজ করব ৷"