বেঙ্গালুরু: ঘরে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। করোনা-কালে তা আরও প্রকট। দিনমজুর স্বামীর কাজ নেই। দু’বেলা দু’মুঠো জোটাতেই প্রাণান্তকর অবস্থা কর্নাটকের কস্তুরী চালাভরির। কিন্তু এখন করোনা লকডাউন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য টিভি চাই। দূরদর্শনের ক্লাসে যাতে ছেলেমেয়েরা চোখ রাখতে পারে তাই নিজের মঙ্গলসূত্র বন্ধক দিয়ে টিভি কিনেছেন কস্তুরী।
কর্নাটকের গাদাগ জেলার নারগুন্দ তালুকের রাড্ডের নাগানুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। চার সন্তানের জননী কস্তুরী। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তিন ছেলেমেয়ে পড়ে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে। অনটনের সংসারে তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো রীতিমতো কষ্টের। কিন্তু হার মানেননি কস্তুরী,তিনজনের পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছিলেন। সব ওলটপালট করে দিল করোনাভাইরাস। স্কুলে যাওয়া বন্ধ। ক্লাস বলতে দূরদর্শনের সম্প্রচার।কিন্তু বাড়িতে টিভি না-থাকায় ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারছিল না। কস্তুরীর কথায় ‘‘টিভি নেই। ছেলেমেয়েরা অন্যের বাড়িতে গিয়ে টিভি দেখে। কিন্তু শিক্ষক যখন বললেন টিভিতে ক্লাস নেবেন, তখন বুঝলাম ওদের ভবিষ্যতের জন্য এবার টিভিটা দরকার। টিভি কেনার জন্য কেউ ধার দিতে চাইল না। টাকা জোগাড় করতে মঙ্গলসূত্র বন্ধক দিলাম’’। ১২ গ্রাম সোনার মঙ্গলসূত্র বন্ধক দিয়ে সেই টাকায় টিভি কিনে আনেন কস্তুরী।
ঘটনার কথা জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন এলাকার তহসিলদার। এগিয়ে এসেছেন কংগ্রেস বিধায়ক জামির আহমেদ। কস্তুরীর পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন। রাজ্যের মন্ত্রী সিসি পাটিল ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কস্তুরীর এই অদম্য জেদকে কুর্নিশ জানিয়ে এগিয়ে এসেছেন প্রতিবেশীরাও। তারাও কিছু সাহায্য করেছেন। যাঁর কাছে মঙ্গলসূত্রটি কস্তুরী বন্ধক রেখেছিলেন, তিনি সেটি ফিরিয়ে দিয়েছেন। এমনকি, টাকা শোধ দেওয়ার জন্য কোনও সময়সীমাও বেঁধে দেননি তিনি।