নয়াদিল্লি: পহেলগাঁও হামলার ৬ দিনের মাথাতেও জড়িত জঙ্গিরা অধরা। টানা তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। জম্মুর ডোডা ও কিশতোয়ার জেলায় জঙ্গিদের খোঁজে চলছে তল্লাশি। প্রায় ডজনখানেক সন্দেহভাজন জঙ্গির বাড়ি রয়েছে এই দুই জেলায়। এই সন্দেহভাজন জঙ্গিদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ রয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ। নাশকতার লিঙ্কম্যান সন্দেহে আগেই ১৪ জন জঙ্গির তালিকা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। জঙ্গিদের বাড়ি ধরে ধরে তল্লাশি চলছে।
প্রত্যেক ভারতীয়র রক্ত ফুটছে। ষড়যন্ত্রকারীদের কড়া জবাব দেবই। পহেলগাঁও হামলা নিয়ে ফের একবার নাম না করে পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাতের হুঙ্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী। একইভাবে হুঙ্কার শোনা গেছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের গলাতেও। জঙ্গিদের খোঁজে ইতিমধ্যে ভারতীয় সেনা অ্যাকশনে নেমেছে ভূস্বর্গে। কিন্তু প্রত্যাঘাত কবে হবে? সেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। বিহারের সভার পর এবার মন কি বাত-এ পহেলগাঁওকাণ্ডে ফের নাম না করে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
ভূস্বর্গ কাশ্মীরে মঙ্গলবারের ভয়ঙ্কর হত্যালীলার নৃশংসতায় শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। ভয়াবহ জঙ্গি হামলা কেড়ে নিয়েছে ২৬টা প্রাণ। বেছে বেছে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে হিন্দু পর্যটকদের। পাকিস্তানি জঙ্গিদের এই কাপুরুষোচিত হামলার প্রত্য়াঘাত চাইছে গোটা দেশ। রীতিমতো যুদ্ধের মহড়া শুরু করে দিয়েছে তিন বাহিনীর সেনাও।এই পরিস্থিতিতে রবিবার মন কি বাত অনুষ্ঠানে জঙ্গি ও তাদের মদতদাতাদের কড়া শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দিলেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, পহেলগাঁওয়ে ওই হামলা, যারা সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদের হতাশা, কাপুরুষতাকে প্রকাশ করেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ১৪০ কোটি ভারতীয়র পাশে রয়েছে গোটা বিশ্ব। আমি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আবার আশ্বাস দিচ্ছি, তারা ন্যায়বিচার পাবে। ন্যায় মিলবেই। এই হামলায় দোষী ও ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোরতম জবাব দেওয়া হবে। এর আগে বিহারের সভামঞ্চ থেকে পহেলগাঁও হামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, নাম না করে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমি সমগ্র বিশ্বকে বলছি, ভারত প্রত্যেক জঙ্গিকে চিহ্নিত করে, খুঁজে বের করে শাস্তি দেবে এবং তাদের যারা মদত দেয়, পৃথিবীর শেষ প্রান্ত থেকেও তাদের ধরে আনা হবে। সন্ত্রাসবাদ কখনই ভারতের প্রাণশক্তি ভাঙতে পারবে না। সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি পেতেই হবে।' একইভাবে হুঁশিয়ারির সুর শোনা গেছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের গলায়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, এই ঘটনার জন্য় যারা দায়ী খুব শিগগিরই তারা যোগ্য় জবাব পাবে। প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী--হুঁশিয়ারির তালিকা লম্বা হচ্ছে, কিন্তু বদলা কবে নেওয়া হবে? প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। জম্মু ও কাশ্মীর ডোরু কংগ্রেস বিধায়ক গুলাম আহমেদ মির বলেন, 'প্রত্যাঘাতের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এইরকম পদক্ষেপ মোদি সরকার আগেও নিয়েছে। এখন যে পদক্ষেপের ঘোষণা করা হয়েছে, ভবিষ্যতে বোঝা যাবে তার কতটা কার্যকর হল। সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত থাকা উচিত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতির কারণে বিষয়টির গুরুত্ব কমে গেছে।'
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, এটা পাকিস্তানের প্রতি আরও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা প্রতীকী হুমকি দেওয়ার সময় নয়। তারা বুঝতে পারে, এরকম ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধারের সময় এসেছে। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'গোটা দেশের ১৪০ কোটি মানুষ, সব বিরোধী দল আপনার পাশে আছি। আপনি পদক্ষেপ নিন। আপনি পদক্ষেপ নিন। কিন্তু ৪-৫ দিন হয়ে গেল কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এমন কিছু করবেন না যাতে দুটো ধর্মের মধ্যে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে। গোটা দেশ আপনার সাথে আছে। সব রাজনৈতিক বিরোধী দল আপনার সঙ্গে আছে।'