নয়াদিল্লি: গত ডিসেম্বর পশ্চিম হিমালয় এলাকায় ৮০ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি ছিল। জানুয়ারি মাসেও এই এলাকা শুষ্ক। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (India Meteorological Department) জানাচ্ছে এই মরসুমে এই এলাকায় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা তেমন সক্রিয় ছিল না, সেই কারণেই এমন ছবি দেখা গিয়েছে এবার। ভরা জানুয়ারিতেও বরফহীন ছিল গুলমার্গ, খাঁ খাঁ করেছে স্কি-রিসর্ট।


ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় তৈরি হয় এই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। আর এটিই উত্তর-পশ্চিম ভারতে অসময়ের বৃষ্টি (unseasonal rainfall) নিয়ে আসে। এই পশ্চিমী ঝঞ্ঝার না থাকাই এবার ডিসেম্বর একটা বড় সময় এই এলাকায় ঘন কুয়াশার কারণ বলে জানাচ্ছে IMD


পশ্চিমী ঝঞ্ঝা না আসার জন্য একাধিক প্রভাব পড়তে পারে গোটা এলাকায়। প্রথমত, মিষ্টি জলের অভাব ঘটবে এই বিস্তীর্ণ হিমালয় এলাকায়। যার ফলে কৃষিকাজে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে জানানো হয়েছে লাদাখের আবহাওয়া দফতরের তরফে। 


জানুয়ারি মাসে কাশ্মীর (Kashmir) ও লাদাখ (Ladakh) এলাকায় সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা হয়, কিন্তু এবার ছবিটা একেবারে অন্যরকম ছিল। বরফই দেখা যায়নি কাশ্মীর ও লাদাখের বিস্তীর্ণ এলাকায়। 


মোটামুটি ২১ ডিসেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারি এই এলাকায় চলে 'চিল্লাই কালান' (Chillai kalan)--এই সময়টা প্রবল শীত থাকে এই এলাকায়। এই সময়ে যে তুষারপাত (Snowfall) হয়, সেটাই আসলে এই এলাকায় বর্ষার আগে মিষ্টি জলের (Fresh Water) মূল উৎস। এবার পুরো সময়টা শুষ্ক থাকায় নদী ও ঝোরাগুলিও শুকিয়ে গিয়েছে।  


২৫ ডিসেম্বর থেকে উত্তর-পশ্চিম (North West India) ভারতের সমতল এলাকায় অতি ঘন কুয়াশা দেখা গিয়েছে। ১৪ জানুয়ারি সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছিল সেটি। দৃশ্যমানতা নেমে গিয়েছিল শূন্যতে। অমৃতসর থেকে হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ হয়ে বিহারের বিস্তীর্ণ অংশে এমনই পরিস্থিতি ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি হওয়ার মূল কারণ হল ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সক্রিয় পশ্চিমী ঝঞ্ঝার অনুপস্থিতি। এই মাসগুলিতে বেশ কয়েকবার পশ্চিমী ঝঞ্ঝার উপস্থিতি দেখা যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এই বার সেইভাবে কোনও শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝা দেখা যায়নি এই এলাকায়।  ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দুটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দেখা মিলেছিল ভারতে কিন্তু সেই দুটি মূলত গুজরাত, মহারাষ্ট্রের উত্তরভাগ, পূর্ব রাজস্থানেই সীমাবদ্ধ ছিল। এর ফলে পশ্চিম হিমালয়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে এই মরসুমে।


বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মূলত তিনটি কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, সক্রিয় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (western disturbances) না থাকা, দ্বিতীয়ত এল নিনো (El-Nino) পরিস্থিতি থাকা, শক্তিশালী জেট স্ট্রিমের (jet streams)উপস্থিতি।


এই যে বরফহীন মরসুম, তা পর্যটকদের জন্য় ভাল খবর যেমন নয়। তেমনই ওই এলাকায় পরিবেশ-অর্থনীতি এবং সামগ্রিক ভাবে বিশ্ব পরিবেশ এবং জলবায়ু বদলের জন্য়ও ভাল নয়, মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।


আরও পড়ুন: আকাশে উড়ছে জ্বলন্ত বিমান! দৃশ্য দেখে ভয়ে কাঁটা