পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : এক এক ঋতুতে তার এক এক রূপ। আর সেই রূপের টানেই দেশ-বিদেশ থেকে সেখানে ছুটে যান পর্যটকরা। ভ্রমণবিলাসীরা বলেন, স্বৰ্গ যদি কোথাও থাকে, তবে তা এখানেই। কিন্তু, সেই ভূস্বর্গ আজ ২৫ জন হিন্দু পর্যটকের রক্তে লাল। দেশবাসী বলছে, জবাব দিতে হবে...উপড়ে ফেলতে হবে সন্ত্রাসবাদকে! এই পরিস্থিতিতে জঙ্গি ও তাদের মদতদাতাদের খুঁজে খুঁজে বের করে চরম শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বদলার আশ্বাস বা কোটি কোটি মানুষের সমবেদনা...কোনও কিছুতেই ভরবে না ঐশ্বন্যা, সোহিনীদের ক্ষত। উত্তরপ্রদেশ শুভম দ্বিবেদী ও তাঁর স্ত্রী ঐশ্বন্যা। সবেই খাবার খেতে শুরু করেছিলেন। তখনও সব স্বাভাবিক। ঘাড়ের কাছেই এসে দাঁড়িয়েছিল জঙ্গিরা, বোঝেননি। প্রথমে কথা শুনেও আন্দাজ করতে পারেননি, সামনে সাক্ষাৎ মৃত্যু। সেই ভয়ঙ্কর সময়ের বর্ণনা করলেন ঐশ্বন্যা। 

'আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই হয়েছে টা কী?'

ঐশ্বন্যার কথায়, 'আমরা ম্যাগির অর্ডার দিয়েছিলাম, আমি শুভম খেতে বসতে চলেছি...ঠিক সেই মুহূর্তে হঠাৎ একটা ছেলে এসে দাঁড়াল আমাদের পাশে। বন্দুক পাশে রেখে হঠাৎ প্রশ্ন করল হিন্দু নাকি মুসলিম? মুসলিম হলে কলমা পড়ে দেখা। আমি এসব কিছুই জানতাম না। পিছনে তাকিয়ে এসব দেখে ভাবছি, এটা হচ্ছে টা কী? আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই হয়েছে টা কী? আবার জিজ্ঞেস করল হিন্দু নাকি মুসলিম? আমি বললাম হিন্দু। মেরে দিল! মেরে দিল! প্রথম গুলিটা আমার স্বামীকেই করেছিল..'

চোখের জলের হিসেব নেওয়া হবে কতদিনে?

'কেন মেরে দিল? কেন আমার স্বামীকে মেরে দিল?' এখনও ডুকরে ডুকরে উঠছেন তিনি। এই দুঃস্বপ্ন নিয়েই বাকি জীবন বাঁচকে হবে  ঐশ্বন্যাকে। ভাবতেও পারেননি পর্যটকদের উপর এভাবে হামলা হতে পারে। সামনে সন্ত্রাসবাদী, এ কথাও ভাবা ছিল দুঃস্বপ্নের অতীত। এখন এই ক্ষত নিয়ে বাঁচতে হবে বাকি জীবন। এই চোখের জলের হিসেব নেওয়া হবে কতদিনে? এই প্রশ্নটাই করছেন স্বামীহারারা।              

মাত্র দু মাস আগে বিয়ে হয়েছিস শুভমের। এখনই হয়ত বিয়ে করতেন না, কিন্তু ঠাকুরমা বারবার বলতেন,  আমার বয়স হয়েছে, বিয়েটা করেনে...দেখে যেতে চাই। এখন সেই নাতিরই ফাঁকা ঘরের দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠছেন তিনি। মাত্র দুই মাসে সব শেষ ! আর যেন কেউ কাশ্মীর না যায়, বলছেন বিমলা । 

তাজা রক্তে লাল হয়েছে, পহেলগাঁওয়ের সবুজ গালিচা। 'মিনি সুইজারল্য়ান্ড' এখন মৃত্য়ুুপুরী! স্বজনহারা পরিবার থেকে সাধারণ মানুষ,  উপযুক্ত প্রত্যাঘাত চাইছে গোটা দেশ! শুধু ঐশ্বন্যা নন, অপেক্ষায় সোহিনী, শীতল আর ১৪০ কোটির দেশ ।