তিরুঅনন্তপুরম: সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের সামনে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু ক্ষতিও করছে অপরিসীম। যার তার কাছ থেকে ছুটে আসা অশ্লীল আপত্তিকর মন্তব্য বা আচরণ সহ্য করার ক্ষমতা অনেকের থাকে না। তাই জীবন দিয়ে প্রমাণ করলেন কেরলের ৩৫ বছরের এক চিকিৎসক।


কোল্লাম জেলার কিলিকোল্লুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, অনুপ কৃষ্ণ নামে ওই চিকিৎসক একটি হাসপাতাল চালাতেন, নাম অনুপ অর্থো কেয়ার হাসপাতাল। সপ্তাহখানেক আগে ৭ বছরের একটি মেয়ের হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করেন তিনি। অস্ত্রোপচারের সময়েই মেয়েটির কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। অন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সে বাঁচেনি। তার পরিবার ও স্থানীয় মানুষ এই মৃত্যুর জন্য অনুপকে অভিযুক্ত করেন। শুরু হয় হাসপাতালের বাইরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। পূর্ব কোল্লাম থানায় তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করা হয়। তদন্ত শুরু করেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এ প্রদীপ কুমার।

তদন্ত একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল, মৃত শিশুর ময়নাতদন্ত রিপোর্টও এখনও হাতে পায়নি পুলিশ। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর উদ্দেশে ক্রমাগত ছুটে আসা নোংরা মন্তব্য আর খুনী তকমা আর সহ্য করতে পারলেন না অনুপ কৃষ্ণ। কাড়াপ্পাকাড়া এলাকায় নিজের বাসভবনের বাথরুমে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। মৃত্যুর আগে বাথরুমের দেওয়ালে সরি লেখার চেষ্টা করেছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, তারা তদন্ত করে দেখবে, ওই শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে অনুপের আত্মহত্যার যোগ আছে কিনা। তাঁকে অনলাইনে বা অন্য কোনওভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল কিনা তাও তারা খতিয়ে দেখবে।

বহু চিকিৎসক অবশ্য প্রয়াত সার্জনের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। এঁদের মধ্যে একজন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কেরালার ভাইস প্রেসিডেন্ট চিকিৎসক সালফি নুহু। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, করোনার মধ্যে ওই শিশুর অপারেশনে রাজি হননি বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। কিন্তু অনুপ পিছিয়ে যাননি। শিশুটির মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু তারপরেই এসে পড়ল বিচারের জন্য তৈরি সোশ্যাল মিডিয়া সৈন্যরা। তারা রায় দিল, দোষ চিকিৎসকের। দ্রুত উপার্জনের জন্য তাঁকে খুনীও বলে দিল তারা। এর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেতে প্রচার করল নেগেটিভ নিউজ। কিন্তু কেরালা একজন অসামান্য চিকিৎসককে হারাল।  এমন চলতে পারে না, সাইবার ল-তে পরিবর্তন আনা উচিত। মত প্রকাশের স্বাধীনতা জরুরি কিন্তু চরিত্র হনন মেনে নেওয়া উচিত নয়।

আর একজন চিকিৎসক লিখেছেন, সবাইকে সারিয়ে তোলার মত জাদু ওষুধ চিকিৎসকদের কাছে নেই। তাঁরাও মানুষ। হাতে যেটুকু সুযোগসুবিধে আছে, যেটুকু শিক্ষা তাঁরা অর্জন করেছেন ও বিজ্ঞান যতটা এগিয়েছে, তার ভরসায় তাঁরা এই পেশায় এসেছেন। শারীরিক জটিলতার কারণেও মৃত্যু হতে পারে। সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়েই সকলে খুন খুন বলে চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। এই আত্মহত্যা প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীর হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করল, সমাজের নীরবতা এর জন্য দায়ী। তিনি লিখেছেন।