নয়াদিল্লি: তলপেটে হামলাবাজদের লাথি খেয়ে পুত্রসন্তান প্রসব করলেন এক মহিলা! ৩০ বছরের শাবানা পরভিনের জীবনে ২০২০-র দিল্লি দাঙ্গা যেমন অভূতপূর্ব বিভীষিকা ডেকে এনেছে, তেমনই তাঁকে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে যা এক কথায় বলা যায়, মিরাক্যাল, অলৌকিক কাণ্ড।
উত্তরপূর্ব দিল্লির কারওয়াল নগরের বাসিন্দা শাবানা, তাঁর স্বামীকে বাড়িতে চড়াও হয়ে চরম হেনস্থা করে মারমুখী জনতা। একদল হামলাকারী তাঁদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, তাঁদের লাথি মারে, মারধরও করে। গত সোমবার রাতে ঘরে ঘুমোচ্ছিল শাবানার পরিবার। ছিলেন শাবানা, তাঁর স্বামী, তাঁদের দুটি বাচ্চা ও শাবানার শাশুড়ি নাসিমা। আচমকা দরজা ভেঙে ঢোকে একদল উন্মত্ত লোক।
তারপর কী হল, জানাতে গিয়ে নাসিমা সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ওরা ধর্ম তুলে গালিগালাজ করে, আমার ছেলেকে মারধর করে। কয়েকজন ছেলেবউয়ের তলপেটে লাথিও মারে। ওকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়লে আমার ওপর চড়াও হয় ওরা। সেই রাতে প্রাণে বাঁচব, ভাবতে পারিনি। কিন্তু ঈশ্বরের আশীর্বাদ থাকায় কোনওভাবে দাঙ্গাবাজদের হাত থেকে সবাই পালাতে সক্ষম হই। শাবানাকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই, কিন্তু ডাক্তাররা বলেন, আল-হিন্দ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। ওখানেই বাচ্চার জন্ম হয় বুধবার।
দু দশকের বেশি সময় বাদে ঘরহারা একটা পরিবার। সব কিছুই কেড়ে নিয়েছে দাঙ্গা। শাবানা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে তাঁকে নিয়ে কোথায় যাবেন, জানেন না নাসিমা। বলছেন, সব তো গেল। কিছুই অবশিষ্ট নেই। হয়তো কোনও আত্মীয়ের বাড়ি যাব, নতুন করে শুরু করা যায় কিনা, দেখি।
শাবানার দুটি সন্তানের একজন, ৬ বছরের আলিকে একদিনের ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে শোনা গেল, ওকে সারাজীবন সব বিপদ থেকে আগলে রাখব, ওর যত্ন করব।
বিস্ময়কর সন্তান বা ‘মিরাক্যাল বেবি’-কে ঘিরে ওদের পুরো পরিবারেই এই ভরসার আশ্বাস ছড়িয়ে পড়ছে। উচ্ছ্বাসে ভাসছে পরিবারটি। এই নবজাতক হয়তো জীবনটাই বদলে দেবে, এই আশায় বুক বাঁধছেন শাবানারা। আগুনে ভস্মীভূত বর্তমান থেকেই মিলবে আগামীর আশার আশা, নতুন দিশা।
দিল্লির সাম্প্রতিক হিংসায় লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ধর্মীয় পরিচয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে ঘর পুড়েছে জাফরাবাদ, মৌজপুর, বাবরপুর, যমুনা বিহার, ভজনপুরা, চাঁদ বাগ, শিব বিহারের বাসিন্দাদের।