পিয়ংইয়ং: দেশে খাদ্য সঙ্কটের মাঝে কুকুর পোষা এক অন্য়ায় বিলাসিতা। এমনটাই মনে করছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। তিনি কুকুর পোষাকে পুঁজিবাদী অবক্ষয় বলে আখ্যা দিয়েছেন। পোষা কুকুর বিক্রি ও জবাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিম বলেন, কুকুর পোষা এখন আইনবিরোধী কাজ। বাড়িতে কুকুর পোষাকে বুর্জোয়া আদর্শদের কলঙ্কিত ধারা বলে নিন্দা জানান তিনি। এক প্রতিবেদনে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম ছোসুন ইলবো জানায়, পোষা কুকুর থাকা বাসা-বাড়ি ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছে উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষ। এখন জোরপূর্বক মালিকের কাছ থেকে তার কুকুরকে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে কুকুরের মালিকানা। সেগুলোকে নিজের কব্জায় নিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। পরে কিছু কুকুরকে চিড়িয়াখানায় বন্দি করা হচ্ছে। বাকিগুলোকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে কুকুরের মাংস বিক্রির রেস্তোরাঁয়।


কোরিয় উপত্যকার বাসিন্দাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই কুকুরের মাংস রুচিকর একটি খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু সেই ঐতিহ্য দক্ষিণ কোরিয়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তারপরও ভোক্তাদের চাহিদা পূরণে বছরে দেশটিতে ১০ লাখ কুকুর লালনপালন করে স্থানীয় ফার্মগুলো। উত্তর কোরিয়ায় শুধু কুকুরের মাংস পাওয়া যায় এমন অনেক রেস্তোরাঁ রয়েছে। গ্রীষ্ম এবং শীতে স্থানীয়রা কুকুরের মাংস খেয়ে থাকে। তাদের ধারণা এ খাবার তাদের শারীরিক এবং মানসিক শক্তি বাড়ে। মশলাদার স্যুপ এবং সিদ্ধকরা সব্জীর সঙ্গেও কুকুরের মাংস পরিবেশন করা হয়। অনেকের ধারণা শীতে এটি তাদের শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

ছোসুন ইলবোর প্রতিবেদনে বলা হয়, পোষা কুকুরের মালিকরা কিম জং উনকে তাঁর অগোচরে অভিশাপ দেন। কিন্তু সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশের বাইরে গিয়ে প্রতিবাদ করার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই। ১৯৮৯ সালে ওয়ার্ল্ড ফেস্টিভাল অব ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্টস নামের বৈশ্বিক আয়োজনের পর থেকে নিজেদের সম্মান বাড়ানোর জন্য কুকুর পোষা শুরু করে উত্তর কোরীয়রা। হঠাৎ কুকুর পোষা নিষিদ্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত বিস্মিত করেছে তাদের।

আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে দেশটির ধনী ব্যক্তিরা কুকুর পোষেন। কুকুর নিয়ে রাস্তাঘাটেও চলাফেরা করেন তারা। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও একসময় কুকুর পালনকে ঐতিহ্য হিসেবে প্রচার করা হয়।২০১৮ সালে কিম জং উন নিজে এক জোড়া দক্ষ শিকারি কুকুর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-েইনকে উপহার দিয়েছিলেন। চির শত্রু দু’রাষ্ট্রের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠার স্মারক হিসেবে।

উত্তর কোরিয়ায় আড়াই কোটির বেশি মানুষের বসবাস। যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই ব্যাপক খাদ্য সংকটে আছে বলে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে জাতিসংঘ। উত্তর কোরিয়ার দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম এবং পরমাণু কর্মসূচির কারণে দেশটির উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ সমর্থক চীন। বেজিং থেকে অধিকাংশ খাদ্যপণ্য আমদানি করে পিয়ংইয়ং। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে উত্তর কোরিয়া।

এছাড়া, গেলো বছর বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয় উত্তর কোরিয়া। চলতি মাসে বন্যার কবলে পড়ে কিমের দেশ। যাতে খাদ্য-শস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।এ পরিস্থিতিতে কিম জানান, সংকট মোকাবিলায় তার দেশের জনগণ এবং সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ। বৃহস্পতিবার পলিটব্যুরোর এক সম্মেলনে তিনি বলেন, বন্যার কারণে দেশের জনগণ সংকটে পড়লেও করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন শঙ্কায় তিনি বিদেশি কারো থেকে সহায়তা নেবেন না। নিজের তহবিল থেকে ত্রাণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কিম।