কলকাতা: ১৯৬৩-তে লেখা চিঠি। এক লেজেন্ড লিখেছিলেন আর এক আকাশছোঁয়া মানুষকে। এতদিন জনচক্ষুর আড়ালে থাকা সেই চিঠি এবার প্রকাশ্যে এল। সৌজন্যে সন্দীপ রায়, সত্যজিৎ রায়ের পুত্র।
চিঠিটি সত্যজিৎকে লিখেছিলেন কিশোরকুমার। তারিখ ৪ নভেম্বর, ১৯৬৩। তাতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, চারুলতা-র একটি গান রেকর্ডের জন্য কেন তখন তাঁর পক্ষে মুম্বই থেকে কলকাতা যাওয়া সম্ভব হবে না। চিঠিতে তিনি প্রবাদপ্রতিম পরিচালককে সম্বোধন করেছেন মানিকমামা বলে। লিখেছেন,
আপনার চিঠি ও ট্রাঙ্ক কল পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আপনার পরিচালনায় আপনার ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ অসামান্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আজকাল আমি কোনও শিল্পীর জন্য গাই না কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে। আর বিষয়টি আপনার ওপরেই ছাড়ছি.. আপনি আমায় কলকাতা আসতে বলেছেন কিন্তু বিষয় হল, আগামী কদিনের মধ্যে আমি সম্ভবত সময় বার করতে পারব না, এ মাসের প্রায় প্রত্যেক দিন আমার শ্যুটিং রয়েছে। তা ছাড়া সপ্তাহখানেক আগে হরিদ্বার থেকে ফেরার পর থেকেই আমার মা অত্যন্ত অসুস্থ। চিকিৎসক বলেছেন, একা তাঁকে রেখে কোথাও যাওয়া আমার উচিত নয়।-
সত্যজিৎ ও তাঁর স্ত্রী বিজয়া রায়কে মুম্বই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কিশোর। বলেছেন, কোনও সমস্যা ছাড়াই সেখানে গান রেকর্ড করে দেবেন তিনি। লিখেছেন, যদি মঙ্কুমাসি (বিজয়া)-কে নিয়ে আপনি বম্বে আসেন আর আমার বাড়িতে ওঠেন তবে এ মাসের ২৬ থেকে ৩০-এর মধ্যে যে কোনও সময় আমি গান রেকর্ড করে দেব। আপনার নিশ্চয় কোনও সমস্যা হবে না।
আপনি এই প্রস্তাবে রাজি থাকলে খুব অল্প খরচে (মিউজিসিয়ান ও রেকর্ডিং) আমি সব ব্যবস্থা করে দেব, আর যদি কোনও কারণে আপনি আসতে না পারেন, আমি অত্যন্ত দুঃখিত হব। তবে যাই হোক, আমি যা করার অবশ্যই করব।
কিশোর পুত্র অমিত কুমার জানিয়েছেন, সত্যজিৎ সম্ভবত সে বছর ডিসেম্বরে মুম্বই যেতে রাজি হন, গানটি রেকর্ডও হয়। দুই পরিবারের দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা ছিল বলেও তিনি জানিয়েছেন।
অমিত বলেছেন, লকডাউনে সময় কাটাতে বাবার পুরনো বাক্সপ্যাঁটরা ঘাঁটছিলেন সন্দীপ। সেখান থেকেই বার হয় এই চিঠিটি। ভারতীয় চলচ্চিত্রের মোড় ঘোরানো ছবি চারুলতা-য় আমি চিনি গো চিনি গানটি কিশোরকুমার গেয়েছিলেন।
সন্দীপ জানিয়েছেন, ওই চিঠি ছাড়াও তিনি তাঁর বাবার ছবির বহু না দেখা নেগেটিভ পেয়েছেন। তা ছাড়া মিলেছে আকিরা কুরোসাওয়া ও রিচার্ড অ্যাটেনবোরোর লেখা চিঠি।