নয়াদিল্লি: আমেরিকার স্বাস্থ্য গবেষণার একেবারে মাথায় এবার বঙ্গতনয়। কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী জয় ভট্টাচার্য সেখানে গুরুদায়িত্ব পেতে চলেছেন। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেল্থ (NIH)-এর জন্য তাঁকে মনোনীত করেছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার প্রধান চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র NIH. সেখানে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণায় নেতৃত্ব দেবেন জয়, যাতে উপকৃত হবে গোটা পৃথিবী। (Jay Bhattacharya)


৫৬ বছর বয়সি জয় স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন-এর অধ্যাপক। চিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি, তিনি অর্থনীতিবিদও। সদ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ট্রাম্প রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রকে ডিপার্টমেন্ট অফ হেল্থ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস বিভাগের প্রধান ঘোষণা করেছেন। রবার্ট কেনেডির সঙ্গেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন জয়। ট্রাম্পের দ্বিতীয় সরকারে স্বাস্থ্যবিভাগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চলেছেন তিনি। (Donald Trump Government 2.0)


NIH-এর ডিরেক্টর হিসেবে মোট ২৭টি প্রতিষ্ঠানের মাথায় বসবেন জয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত যাবতীয় গবেষণা চলবে তাঁর তত্ত্বাবধানে। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা হোক বা অতিমারির মোকাবিলায় তৈরি টিকা,  নতুন ওষুধ আবিষ্কার এবং তার কার্যকারিতা যাচাই, সবকিছুই হবে জয়ের নজরদারিতে,তাঁর অনুমোদনে।


ট্রাম্প তাঁর নাম ঘোষণার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় জয় লেখেন, 'প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে পরবর্তী NIH ডিরেক্টর হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। আমেরিকার বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কার করব আমরা, যাতে আবারও সেগুলি মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে। আমেরিকাকে আবারও সুস্থ করে তুলতে বিজ্ঞানের সুফলকে কাজে লাগাব আমরা'।


স্ট্যানফোর্ডের অধ্যাপক হওয়ার পাশাপাশি, স্ট্যানফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর ইকনমিক পলিসি রিসার্চ, ফ্রিম্যান স্পগলি ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো জয়। স্ট্যানফোর্ড সেন্টার ফর ডেমোগ্রাফি অ্যান্ট ইকনমিকস অফ হেল্থ অ্যান্ড এজিং-এরও প্রধান। স্বাস্থ্য পরিষবার অর্থনৈতিক দিকটি নিয়ে গবেষণা করেন জয়। অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর মানুষের কাছে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য তাঁর।


নোভেল করোনাভাইরাসের জেরে উদ্ভুত অতিমারি পরিস্থিতিতে প্রথম খবরে উঠে আসেন জয়। সেই সময় আমেরিকা সরকারের টিকা-নীতির বিরোধী ছিলেন তিনি। লকডাউন এবং মাস্ক পরা বিরোধিতা করেন। 'Great Barrington Declaration in 2020' শীর্ষক খোলা চিঠিতে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। অর্থাৎ সংক্রমণ ছড়ালে, সংক্রমিত হলে তবেই তা প্রতিহত করার শক্তি গড়ে উঠবে বলে মত ছিল তাঁর। লকডাউন মানুষের প্রভূত ক্ষতি করছে বলেও মত ছিল তাঁর। টিকা বাধ্যতামূলক করাতেও আপত্তি ছিল তাঁর। এর ফলে অনেকেই জয়ের সমালোচনা করেছিলেন সেই সময়। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) তাঁর সমালোচনা করেন। কিন্তু ট্রাম্পের তদানীন্তন সরকারের কেউ কেউ তাঁর মতামতকে সমর্থন জানান। 


এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়েন জয়। ভুয়ো খবর রুখতে গিয়ে আমেরিকার সরকার সোশ্যাল মিডিয়ায় রক্ষণশীল ভাবনাকে দমন করছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। সেই মামলা আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টেও পৌঁছয়। যদিও শেষ পর্যন্ত জো বাইডেন সরকারের পক্ষেই রায় দেয় আদালত। ২০২২ সালে ইলন মাস্ক X (সাবেক ট্যুইটার) অধিগ্রহণ করলে জয়কে সদর দফতরে আমন্ত্রণ জানান হয়। 


কলকাতাতেই জন্ম জয়ের। উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা গিয়েছিলেন। ১৯৯০ সালে ব্যাচেলর অফ আর্টস এবং পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে ডক্টর অফ মেডিসিন সম্পূর্ণ করেন। ২০০০ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন, সবই স্ট্যানফোর্ড থেকে।